সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবে গত বছর এই দিনে নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়। এক বছরে ৫৮ হাজার ৫৪১ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এসব পরীক্ষার প্রতিবেদনে ৯ হাজার ৫২৭ জন রোগীকে করোনা পজিটিভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সংক্রমণের হার দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবের সবশেষ তথ্য থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ল্যাব সূত্র জানায়, বর্তমানে সিলেট বিভাগের চার জেলার সর্বত্র এবং সিলেট শহরের সকল বেসরকারি হাসপাতাল ও সবকয়টি উপজেলা থেকে সংগৃহীত নমুনা শাবিপ্রবির ল্যাবে পরীক্ষা করানো হয়। এছাড়াও সিলেট অঞ্চলের বিদেশ ফেরত সকল যাত্রীদের নমুনা পরীক্ষা এই ল্যাবে করানো হয়।
আরও পড়ুন: করোনা: শাবির ল্যাবে দশ মাসে ৪৫ হাজার ৮৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষা
এছাড়া করোনা শনাক্তকরণ ছাড়াও ল্যাবের গবেষক দল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রের অর্থায়নে কোভিড-১৯ এর ভাইরাস নিয়ে গবেষণা কাজ অব্যাহত রেখেছে। গবেষক দলটি ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগের ৪ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে জিন বিন্যাস (জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করেন।
উন্মোচিত জিন বিন্যাস থেকে ১০টি (সুনামগঞ্জ-৫ ও হবিগঞ্জ-৫) নমুনার জিন বিন্যাস গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটাবেইজে (জিআইএসএআইডি) জমা দেন। যা ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের সহযোগীতায় শাবিপ্রবির ল্যাবে করোনাভাইরাসের (জিনোম সিকোয়েন্স) গবেষণার কাজ চলমান রয়েছে।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক প্রধান বলেন, উন্নত দেশগুলোর মতো আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি এই সিলেট বিভাগের মানুষদের সেবা (কমিউনিটি সার্ভিস) দিতে পেরে আন্তরিকভাবে গর্বিত। এই এক বছরে আমাদের ল্যাবের কার্যক্রমে বড় অর্জন "আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতা"।
তিনি বলেন, আমাদের জিইবি বিভাগের শিক্ষার্থীদের জিনোম ও জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল ডিএনএ-আরএনএ নিয়ে গবেষণার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় নমুনা পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও নির্ভরতার বিষয়টি থাকছে শতভাগ। এখন পর্যন্ত ফলাফল প্রকাশে কোনো ধরনের ভুলত্রুটি ধরা পড়েনি। আমাদের ছেলেরা বড় বড় উৎসবের বিশেষ করে পরপর তিনটি ঈদের দিনও ল্যাবের কার্যক্রম চালু রেখেছে। ল্যাবের মেইনটেনেন্স ছাড়া একদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়নি। প্রথমদিকে আপদকালীন হলেও এখন স্থায়ীভাবে এই ল্যাবে সংশ্লিষ্ট সকলেই সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের র্ধ্বতন মহলের প্রতি আহ্বান রাখবো আমাদের এই জিইবি বিভাগের যারা কাজ করছে তাদের স্থায়ী ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নজর রাখতে। আশা রাখছি যতোদিন প্রয়োজন হয় এই সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে।
আরও পড়ুন: শাবিতে সিলেটের প্রথম ট্রান্সজেনিক গ্রিনহাউস উদ্বোধন
শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শাবিপ্রবির এই ল্যাব দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের জন্য একটি আস্থার জায়গা। এই অঞ্চলের মানুষের সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে করোনাভাইরাস প্রাদুভার্বের শুরুতে এই ল্যাবটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ল্যাবে যারা কাজ করছেন তারা সবাই আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। সিলেট অঞ্চলের মানবিক সেবায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যতদিন এই সেবা প্রয়োজন হবে সিলেটসহ সারা দেশের জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র পাশে থাকবে।
গত বছর ১৮ মে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শাবিতে আরটি পিসিআর ল্যাবের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। এরপর থেকে এ ল্যাবে করোনা শনাক্তকরণ কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে শিক্ষাভবন ‘ই’-এর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২২৫ নম্বর কক্ষে এ ল্যাব চালু করা হয়। ল্যাবের তত্ত্বাবধানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ।
এর আগে, মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য পিসিআর ল্যাব চালুর অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: শাবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে আওয়ামীপন্থীদের দ্বিমুখী লড়াই