বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ‘কঠোর লকডাউনে’ দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও বিদায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ও ৬২২ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে করোনার ভয়াল থাবা প্রতিরোধ করে সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৫১৪ জনের।
রবিবার সকালে নগরীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়ে, সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিতভাবে ৩২৩টি দুর্ঘটনায় ৩৩১ জন প্রাণ হারায় ও ৭২২ জন আহত হয়।
আরও পড়ুন: খুলনা-যশোর মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১
সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
লকডাউনের কারণে মানুষের যাতায়াত সীমিত হলেও গণপরিহন বন্ধ থাকার সুযোগে সড়কে ব্যক্তিগতযান বিশেষ করে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা-ব্যাটারিচালিত রিক্সা, ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানে গাদাগাদি করে যাতায়াতের কারণে এবারের ঈদে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী বেড়েছে।
আরও পড়ুন: বাঘাইছড়িতে চাঁদের গাড়ি উল্টে নিহত ১, আহত ২
ঈদযাত্রা শুরুর দিন গত ৭ মে থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ২১ মে পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন ও নিহত ৬২২ জন আহত হয়েছে।
উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ২টি ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছে। নৌ-পথে ৩টি দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ১০০ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে যৌথভাবে ৩২৩টি দুর্ঘটনায় ৩৩১ জন নিহত ও ৭২২ জন আহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে সড়ক দুর্ঘটনায় সংসদ সদস্যসহ আহত ২
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৪৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত, ১৯৯ জন আহত হয়েছে যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৫.২৮ শতাংশ, নিহতের ৪৩.০৩ শতাংশ এবং আহতের ৩১.৯৯ শতাংশ প্রায়।
এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ১৫১ জন চালক, ৮০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৭৯ জন পথচারী, ৬৩ জন নারী, ৪৫ জন শিশু, ১৫ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন সাংবাদিক, ১০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯ জন শিক্ষক, ৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৪ জন চিকিৎসক, ২ জন আইনজীবী এবং ১ জন প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে।
এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ১ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন র্যাব সদস্য , ১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ২ জন বিজিবি সদস্য, ৩৫ জন নারী, ৩ জন চিকিৎসক, ২২ জন শিশু, ১৩ জন শিক্ষার্থী, ৭ জন শিক্ষক, ৯৬ জন চালক, ৩১ জন পরিবহন শ্রমিক, ১ জন প্রকৌশলী, ৬৯ জন পথচারী, ২ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।
সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩৬.৯৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২.৩৭ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১৩.২৪ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৭.৫৩ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ৭.০৭ শতাংশ অটোরিক্সা, ৬.৮৪ শতাংশ ব্যাটারী রিক্সা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ও ৫.৯৩ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৪.২১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৭.১৬ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৭.৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, ১০.০৬ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারনে ও ০.৬২ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংগঠিত দুর্ঘটনার ৩২.৩৮ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪০.৮৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২২.৩২ শতাংশ ফিডার রোডে সংগঠিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩.১৪ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.২৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে সংগঠিত হয়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, লকডাউনে দেশে গণপরিবহন বন্ধ ও মানুষের যাতায়াত অত্যন্ত সীমিত থাকার পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, সড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করার ফলে মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষের যাতায়াতে এত বেশি সংখ্যক দুর্ঘটনা ও প্রানহানির ঘটনা ঘটেছে।
তিনি সড়ক দুর্ঘটনাকে মহামারি করোনাভাইরাসের মত গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানান।
সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ন মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।