শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমা করা তার কাজ নয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নির্বাচনে বিজয় উদযাপনের সময় ড. ইউনূসকে ক্ষমা করার বিষয়টি বিবেচনা করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রম আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতে এখানে তার কিছু করার নেই।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) গণভবনে সফররত বিদেশি পর্যবেক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী সৌজন্য সাক্ষাতের সময় এক ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচন ২০২৪: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চীনের অভিনন্দন
শেখ হাসিনা বলেন, ইউনূস শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং নিজের কর্মচারীদের বঞ্চিত করেছেন। সেসব কর্মচারীরাই শ্রম আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। ‘এ বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। তিনি যাদের বঞ্চিত করেছেন, তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।’
কোনো বিরোধী দল ছাড়াই বাংলাদেশকে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে তিনি বিশ্বাস করতে পারেন কি না- বিবিসির এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, প্রতিটি দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে।
ওই সাংবাদিক আরও উল্লেখ করেন, রবিবারের নির্বাচনে ৬০ শতাংশ ভোটার ভোট দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি কোনো নির্দিষ্ট দল নির্বাচনে অংশ না নেয়, তার মানে এই নয় যে গণতন্ত্র নেই। তিনি বলেন, 'জনগণ অংশ নিয়েছে কি না- তা বিবেচনা করতে হবে।’
তিনি বলেন, 'দলটি নির্বাচনে অংশ নেয়নি এবং তারা জনগণকে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জনগণ তাদের কথা শোনেনি।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, এখানে জনগণের অংশগ্রহণই মূল বিষয়। এটা ছাড়া গণতন্ত্রের অন্য কোনো সংজ্ঞা আছে কি না তা জানেন না।
সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের জন্য বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করেন, তিনি কীভাবে একটি গণতান্ত্রিক দলকে সংজ্ঞায়িত করেন। তিনি বলেন, 'তারা একটি সন্ত্রাসী দল।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইন্দিরা গান্ধী, গোল্ডা মেইর, মার্গারেট থ্যাচার ও শ্রীমাভো বন্দরনায়েকের মতো মহান নারী নেতাদের সঙ্গে তার তুলনা হোক তা তিনি চান না।
তিনি বলেন, 'তারা মহান নারী ছিলেন। আমি একজন সহজ-সরল মানুষ।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করার সময় তিনি নিজেকে নারী বা পুরুষ মনে করেন না।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসা এক মার্কিন নাগরিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'প্রতিটি দেশের সঙ্গে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। সুতরাং, আমাদের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক। এটা এখন আপনার এবং আপনার সরকারের ওপর নির্ভর করছে।’
পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হচ্ছে 'সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়’, তাই বাংলাদেশের সব দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
ভারতকে বাংলাদেশের মহান বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার পরবর্তী সরকারের লক্ষ্য হবে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ (২০২৬ সাল থেকে) হিসেবে উন্নীত করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করা, দারিদ্র্য বিমোচন, চরম দারিদ্র্য বিমোচন, দেশকে গৃহহীনমুক্ত করা। সর্বোপরি দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখা এবং দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের অভিনন্দন
এক বিদেশি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং জনগণের উন্নত জীবন নিশ্চিত করাই আমার মূল লক্ষ্য।’