এবার কুমিল্লায় দুর্গোৎসবকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহন করেছে প্রশাসন।
কুমিল্লা নগরীর নানুয়া দিঘীর পাড়ের অস্থায়ী দুর্গা পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তায় প্রাধান্য দিয়ে জেলা পূজা উদযাপন প্রস্তুতি সভায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন কমিটির নেতারা।
সকল পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা, নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রাখা এবং সূর্যাস্তের আগে বিসর্জন সমাপ্ত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কোরআন পাওয়ার জেরে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনার কথা মাথায় রেখে এই প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে ব্যস্ত নড়াইলের প্রতিমা শিল্পীরা
অস্থায়ী পূজামণ্ডপগুলোকে নিরাপত্তায় প্রাধান্য দিয়ে জেলা পূজা উদযাপন প্রস্তুতি সভায় ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা’র কথা জানিয়েছেন কমিটির প্রধানরা।
নির্দেশনা মত, অস্থায়ী পূজামণ্ডপ কমিয়ে আনার জন্য হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের অনুরোধ করেছেন কমিটি।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১ অক্টোবর থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দুর্গোৎসবে কুমিল্লার ৭৯৪টি পূজামণ্ডপে পূজা চলাকালে দিন রাত আনসার সদস্যরা প্রহরা থাকবে।
এছাড়া পুলিশ, র্যাব, বিজিবির আলাদা টহল থাকবে। জেলার কোন কোন পূজামণ্ডপে অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রয়োজন তার তালিকা চাওয়া হয়েছে পূজা উদযাপন কমিটির কাছে।
এছাড়া পূজার সময় পূজামণ্ডপের জন্য সরকারি বরাদ্দ সঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে বলেও জানানো হয়।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
এসময় কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. আবদুল মান্নান, র্যাব-১১ সিপিসি-২ এর অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও চান্দিনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাপস বকশী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অচিন্ত্য দাস টিটুসহ মুসলমান ধর্মীয় নেতা, ইমাম, ব্যবসায়ী নেতারা, বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: শিকদারবাড়ির দুর্গোৎসব এ বছরও বড় পরিসরে হচ্ছে না
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, নানুয়া দিঘীর পাড়ের পূজা মণ্ডপে এবার আরও জাঁকজমকভাবে পূজা হবে। জেলার সকল পূজামণ্ডপে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে।
মন্দির ও পূজামণ্ডপে প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাসেবকরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। কুমিল্লা এবার উৎসব মুখর এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশে দুর্গোৎসব পালিত হবে।
সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, পূজামণ্ডপের পরিধি অনুসারে বড় পূজামণ্ডপে আটজন, বরোয়ারি পূজামণ্ডপে ছয়জন এবং পারিবারিক পূজামণ্ডপে চারজন করে আনসার সদস্য পূজা চলাকালীন সময়ে দিনরাত নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির টহল মোতায়েন থাকবে।
একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হবে-যেখান থেকে পুরো জেলার পূজার সার্বক্ষণিক খবর নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা উপজেলার মন্দির এবং পূজামণ্ডপগুলোর তালিকা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
পুলিশ সুপার মো. আবদুল মান্নান বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কেউ যেন উস্কানি কিংবা গুজব না ছড়াতে পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আগামী বছর থেকেই যেহেতু জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হবে সেই বিবেচনায় স্বাধীনতা বিরোধী চেতনার কেউ যেন রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ধর্মকে ব্যবহার না করতে পারে সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় নেতাদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদেরকেও তিনি অনুরোধ করে বলেন, যে কোন গুজব কিংবা উস্কানিতে আগে কান না দিয়ে যাচাই করা এবং প্রয়োজনে পুলিশকে জানানো প্রয়োজন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, কুমিল্লার যে সম্প্রীতির ঐতিহ্য রয়েছে এই দুর্গা পূজায় আমরা প্রমাণ দিতে চাই।
আরও পড়ুন: এ বছর হচ্ছে না দেশ সেরা শিকদারবাড়ির দুর্গোৎসব, পূজা হবে ঘটে
এদিকে জেলায় এবার ৭৯৪টি পূজামণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি তাপস বকশী বলেন, আমরা সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আশাবাদী। ঝূঁকিপূর্ণ পূজামণ্ডপের তালিকা প্রশাসনকে দেয়া হবে। আমরা নিজেরাও থাকবো যেন পূজামণ্ডপে কোন উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না হয়।
মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাশ টিটু বলেন, আমরা সরকারি সকল নির্দেশনা মেনে এবার উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব পালন করবো।
সভায় উপস্থিত মুসলিম ধর্মের নেতাদের মধ্যে আলমগীর খান বলেন, আমরা অতীতেও সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাইদের পাশে ছিলাম এবং এবারও যে কোন উৎসবে তাদের পাশে থাকবো।
কুমিল্লা ঐতিহ্য আমরা বিনষ্ট হতে দিবো না।