আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া হলেও এই প্রক্রিয়া এমনিতেই চলে না, একে চালাতে হয়। এটিকে ভালভাবে চালাতে হলে অবশ্যই দক্ষ চালকের প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষ চালকের আসনে থাকার কারণেই দেশের সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। তিনি ক্ষমতায় থাকলে এই উন্নয়ন চলমান থাকবে। কোন ষড়যন্ত্রই এই উন্নয়নের গতি থামাতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার বরিশালে ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত দশ তলা বিশিষ্ট মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা ও গতিশীল নেতৃত্বের কারণেই পদ্মা সেতু, কর্নফুলী টানেল, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পসহ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। তাই দেশের সকল মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করে তার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান আনিসুল হক।
আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন এমন একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী বিচার বিভাগের, যেখানে বিচারপ্রার্থী জনগণ ভোগান্তিহীনভাবে দ্রুত ন্যায়বিচার পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধুর এই স্বপ্ন পূরণে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিচার বিভাগের জন্য অত্যাধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ করছে। এজন্য দুই হাজার ৪৬৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের জেলা শহরগুলোতে আট বা ১০ তলা বিশিষ্ট সিজেএম আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় বরিশালে ৪৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ তলা বিশিষ্ট সিজেএম আদালত ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ভবনের নির্মাণ ব্যয়, নির্মাণ শৈলী, আয়তন এবং সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করলে নিশ্চয়ই বলা যায় এটি বরিশালের মাটিতে বিচার বিভাগের এক অনন্য স্থাপনা এবং মুজিববর্ষে বরিশালবাসীকে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের একটি বড় উপহার। এ উপহার দিতে পেরে সরকার অত্যন্ত আনন্দিত, গর্বিত ও তৃপ্ত। কারণ ২০০৭ সালের ১লা নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হওয়ার পর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে অবকাঠামোগত যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল বরিশালে আজ থেকে তার সম্পূর্ণ সমাধান হলো।
আরও পড়ুন: মানব পাচার প্রতিরোধে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন: আইনমন্ত্রী
উক্ত প্রকল্পের কাজের ৮৫ শতাংশ অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, সরকার ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭টি জেলায় পুরাতন জেলা জজ আদালত ভবনগুলোর উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করাসহ বহুমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। ফলে বিচার বিভাগের এজলাস সঙ্কট তথা অবকাঠামোগত সমস্যা এখন অনেকটাই দূর হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, একটি আধুনিক ও দক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যকীয় হলেও অন্যান্য সরকারের আমলে বিদেশি প্রশিক্ষণ গ্রহণ ছিলো বিচারকদের কাছে স্বপ্নের মতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিদেশি প্রশিক্ষণ গ্রহণ তাদের স্বপ্ন নয় বাস্তবে পরিণত হয়েছে। দেশে করোনার অতিমারির পূবর্বর্তী মাত্র সাড়ে তিন বছরে ৮৫৫ জন বিচারককে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, চীন ও জাপানে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। দেশীয় প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দেশেই বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যে মাদারীপুরের শিবচরে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল একাডেমি গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত অধস্তন আদালতে এক হাজার ২২৪ জন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
অধস্তন আদালতে অনেকগুলো নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিভাগীয় শহরগুলোতে একটি করে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, একটি করে সাইবার ট্রাইবুনাল এবং একটি করে মানব পাচার অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে।
আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষা এবং বিচার ব্যবস্থাকে জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে আইনজীবীগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন। সেজন্যই সরকার দেশের আইনজীবীগণের পেশাগত মান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতি ভবন নির্মাণ ও বইপুস্তক ক্রয় বাবদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সরকারি আইন কর্মকর্তাদের মাসিক রিটেইনার ফি চার-পাঁচ গুণ বাড়িয়েছে সরকার। এছাড়া মামলার শুনানীর জন্য দৈনিক ফি এবং ভ্যালুয়েশন ফিও বাড়ানো হয়েছে।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বরিশাল ৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুচ, বরিশালের জেলা ও দায়রা জজ মো. রফিকুল ইসলাম, বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মইদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা।
আরও পড়ুন: অপব্যবহার রোধে প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করা হবে: আইনমন্ত্রী
সরকার বিশ্বাস করে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি নির্বাচন: আইনমন্ত্রী