দেশের সবচেয়ে প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালের ১ জুলাই যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি এ বছর শতবর্ষে পদার্পণ করেছে। শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস সেজেছে বর্ণিল সাজে। আয়োজিত হচ্ছে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরই অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।

টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারপার্সন হাবিবা রহমান বলেন, এ প্রদর্শনীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের জমা দেয়া ১৮ শতাধিক ছবি থেকে বাছাই করা সেরা ১০০ ছবি স্থান পেয়েছে। 

আর এ সেরা ১০০ ছবি থেকে আমরা ১০ টি ছবি নিয়ে আলোকপাত করেছি যা দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, প্রকৃতি ও আবেগের প্রতিনিধিত্ব করে।  

আরও পড়ুন: ঢাবি কর্তৃপক্ষকে একাডেমিক মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর

বাংলাদেশ

আলোকচিত্রী: মো. রবিউল হোছাইন, উইমেন ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ

ছবিটি তোলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের ডিন কার্যালয় সংলগ্ন এলাকা থেকে। বাংলাদেশের ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনকারী কয়েকটি ঘটনার সাক্ষী এ স্থানটি। শিব নারায়ণ দাসের নকশা করা মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রথম এ স্থানেই উত্তোলিত হয়। তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম আব্দুর রব স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে এ পতাকা উত্তোলন করেন।

সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য

আলোকচিত্রী: আবু জাফর মো. ছালেহ্

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে অন্যতম রাজু ভাস্কর্যকে ক্যামেরার চোখে শৈল্পিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আলোকচিত্রী। ১৯৯২ সালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মইন হোসেন রাজুর স্মরণে এ ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে।

উৎসব দিয়েই হোক নতুন বছরের সূচনা

আলোকচিত্রী: পার্বণ আচার্য্য

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ১৯৮৫ সালে যশোরে শুরু হলেও ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে নিয়মিত পালিত হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বাঙালির অসম্প্রদায়িক চেতনার এক মূর্ত প্রতীক এ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ইউনেস্কো একে অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

চির উন্নত শির

আলোকচিত্রী: তাহনিয়াতুল জান্নাত সামিরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন দেয়ালে চিত্রশিল্পী গ্রাফিতির মাধ্যমে বাঙালি জাতির মুক্তির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাত মার্চের ভাষণের একটি মুহূর্ত ফুটিয়ে তুলেছেন। বঙ্গবন্ধুর একটি তর্জনীর ইশারায় গর্জে উঠেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি মানুষ। আর এর মাধ্যমেই আসে আমাদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।

তিন নেতার মাজার

আলোকচিত্রী: পিনু রহমান

আলোকচিত্রী পাখির চোখে তিন নেতার মাজারের ছবিটি তুলেছেন। ক্যাম্পাসের এক প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় মাজারটি অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই অপরিচিত। এখানে শায়িত আছেন পূর্ব পাকিস্তানের তিন বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা- হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন এবং শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক।

অস্তিত্বের গাঁথন

আলোকচিত্রী: আবু জাফর মো. ছালেহ্

আলোকচিত্রী এ ছবির শিরোনাম দিয়েছেন ‘অস্তিত্বের গাঁথন’। আর লাল সবুজের পতাকা তো বাংলাদেশের অস্তিত্বেরই প্রতীক। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির বিভিন্ন সংগঠন বড় আকারের জাতীয় পতাকা তৈরির মাধ্যমে পতাকা উৎসব ও রক্তে রাঙা বিজয় উৎসব পালন করে থাকে।

পরীক্ষা ও কার্জন হল

চিত্রশিল্পী: সাদিয়া আক্তার

কার্জন হল আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন একই সূত্রে গাঁথা। দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপনাটি কেবল একটি ইট পাথরের ভবনই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার মানুষের ইতিহাস। কার্জন হলের ইতিহাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও প্রাচীন। সাবেক শিক্ষার্থীরা এখনও এখানে এসে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। এটি বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বীণাপানি

চিত্রশিল্পী: রজত পাল

পুকুরে ভাসমান দেবী সরস্বতীর প্রতিমাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল থেকে ধারণ করা হয়েছে। দেবীর এক হাতে রয়েছে বাদ্যযন্ত্র বীণা আর অন্য হাত ভক্তদের আশীর্বাদ প্রদান করছেন। এজন্য সরস্বতী বীণাপাণি হিসেবেও পরিচিত।

প্রাকৃতিক জাতীয় পতাকা

চিত্রশিল্পী: মঞ্জুরুল হক শুভ 

এ ছবিটি যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকে এক টুকরো বাংলাদেশ। ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর থেকে তোলা হয়েছে। এ ছবিতে কৃষ্ণচূড়া ফুল আর চারপাশের সবুজ বৃক্ষরাজি যেন জাতীয় পতাকার রুপে সেজেছে।

বিষণ্ন বরষায়

আলোকচিত্রী: সাদাত মো. হাব্বি

এ ছবিতে বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল বাসকে নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আলোকচিত্রী। এ বাসে করেই যাতায়াত করে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বাসের এমম চিত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাবেক হওয়া শিক্ষার্থীদের স্মৃতিকাতর করে তুলবে।

মোহসীনা তাইয়েবা নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর দুটি ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। নিজের অনূভুতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি মোট ৯টি ছবি জমা দিয়েছি। তার মধ্যে দুটি ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। বিষয়টি আমার জন্যে অনেক আনন্দের। আমি যখন দেখি মানুষজন আমার ছবি দেখছেন, মন্তব্য করছেন, তখন অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে। আমার ছবি তোলার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ারও করছেন।’

চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া ইউএনবিকে জানান, ১০০ ছবি থেকে বর্তমান ও সাবেক এ দুই ভাগের মধ্যে তিনটি ছবি করে মোট ছয়টি ছবিকে পুরস্কৃত করা হবে।

আরও পড়ুন: আজ শুরু হচ্ছে ঢাবির ১৬ দিনব্যাপী শতবর্ষ উদযাপন

ঢাবির আবাসিক হলের ক্যান্টিনের দেয়াল ধসে আহত ২