নওগাঁর পত্নীতলায় হালিমা খাতুন ওরফে মিষ্টি (২২) নামে এক গৃহবধূকে পেট্রোল দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে আমদাদপুর কমলাবাড়ী গ্রামে এ ঘটনায় গৃহবধূকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন তার স্বামী রিপন মিয়া (২৪)।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘরের বাইরে থেকে জানালা দিয়ে দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে প্রথমে গৃহবধূ হালিমার শরীরে আগুন ধরে। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার স্বামী রিপন দগ্ধ হন।
পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালিদ সাইফুল্লাহ বলছেন, বুধবার রাত ১১টার দিকে ওই দম্পতিকে হাসপাতালে নেয়া হয়। দুইজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক ছিল। অগ্নিদগ্ধ রোগীর মধ্যে নারী রোগীর (হালিমা খাতুন ওরফে মিষ্টি) শরীরের ৮০ শতাংশের ওপরে পুড়ে গেছে এবং পুরুষ রোগীটার (রিপন মিয়া) প্রায় ৬৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। দুইজনেরই শ্বাসনালী দগ্ধ হয়েছে।
আমরা তাঁদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তৎক্ষণাৎ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করে দেই।
আরও পড়ুন: বরিশালে চাঁদা না পেয়ে গৃহবধূ হত্যার অভিযোগ
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রামেক হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে হালিমা মারা যান। তবে রিপন বর্তমানে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রয়েছেন।
রিপনের ফুফাতো ভাই শাহিনুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, রামেক হাসপাতাল থেকে গৃহবধূ হালিমা খাতুন ওরফে মিষ্টিকে ঢাকা নেয়ার পথে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী-নাটোর সড়কের বানেশ্বর এলাকায় তার মৃত্যু হয়। রিপনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তিনি বর্তমানে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পরেও কিছু সময় পর্যন্ত রিপন কথা বলতে পারছিলেন।
ওই সময় তার ভাই জানান, ঘরে আগুন ধরার সময় তারা জেগেছিলেন। রাত ১০টার দিকে তার স্ত্রী ঘরের জানালার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এ সময় ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে থেকে কে বা কারা তার শরীরে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন রিপন স্ত্রীর শরীরের আগুন নেভাতে গেলে তার শরীরেও আগুন ধরে যায়।
পরে চিৎকার শুনে স্থানীয়রা তাদেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। তবে বিষয়টি সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এটা নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা না আত্মহত্যার চেষ্টা তার সত্যতা খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ভুক্তভোগীর বক্তব্য অনুযায়ী বাইরে থেকে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন দেয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাতে তাঁরা দগ্ধ হতে পারেন।
আবার প্রতিবেশিরা বলছেন, পারিবারিক কলহের জেরে ওই গৃহবধূ প্রথমে শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার স্বামীও দগ্ধ হন।
প্রতিবেশিদের বক্তব্য অনুযায়ী, এটা আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনাও হতে পারে।
নওগাঁর পত্নীতলা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফতাব উদ্দিন বলেন, অগ্নিদগ্ধ রিপন মিয়ার বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর কোন মিল পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এই ঘটনাটিকে আমাদের কাছে নাশকতা বলে মনে হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, মশার কয়েল থেকে সূত্রপাত হওয়া আগুনে তাঁরা দগ্ধ হতে পারেন।
বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে।