অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ অঞ্চলের নৌ-করিডোরের সক্ষমতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন এবং একে টেকসই খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ ও সংযুক্ত নৌপথ খনন এবং টার্মিনালসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর হোটেল রেডিসনে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর উপস্থিতিতে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন প্রকল্প পরিচালক বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আইউব আলী, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গালফ কবলা-কর্ণফুলী যৌথ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশিদ, অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধারতি-বঙ্গ যৌথ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বঙ্গ ড্রেজার্স লিমিটেডের পরিচালক মো. আইনুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নৌপথের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ কমাতে দেশের নৌপথের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার।
আরও পড়ুন: জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া লঞ্চের টিকিট পাওয়া যাবে না: নৌপ্রতিমন্ত্রী
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে থমকে দেয়া হয়েছিল। পঁচাত্তর পরবর্তী সরকার দেশের নৌপথসহ কোনো পথেই উন্নয়ন করেনি, এরপর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশের নৌপথ পুনরায় উদ্ধার ও উন্নয়নে হাত দেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজ যেই দুটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে তার কাজ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের নৌপথের যে অগ্রগতি হবে তাতে দেশের নৌপথ ব্যবহারকারী পণ্যবাহী যান ও যাত্রীরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।
চুক্তিপত্র অনুযায়ী ১৩টি নৌরুটের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ খনন কাজ করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গালফ কবলা-কর্ণফুলী যৌথ প্রতিষ্ঠান এবং ধারতি-বঙ্গ যৌথ প্রতিষ্ঠান। এজন্য ব্যয় হবে ৪৩০ কোটি টাকা।
প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৯০০ কিলোমিটার নৌপথ খনন, ছয়টি স্থানে নৌযানসমূহের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, তিনটি ফেরি ক্রসিং এলাকায় সংরক্ষণ ড্রেজিং, চারটি প্যাসেঞ্জার ও দুটি কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ ও উন্নয়ন, ১৫টি ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ এবং দুটি মাল্টিপারপাস ভেসেল সংগ্রহ করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরের আশুগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালে মূল নদী ও শাখাসমূহ (প্রায় ৯০০ কিলোমিটার নৌপথ) পারফরম্যান্স বেইজড কন্ট্রাক্ট ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ এবং নাব্যতা সংরক্ষণ করা হবে। এ নৌ-করিডোর মধ্যে ছয়টি স্থানে নৌযানসমূহের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ।
প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত স্থানসমূহ হচ্ছে- ষাটনল, চরভৈরবী, চাঁদপুর, মেহেন্দীগঞ্জ, সন্দ্বীপ এবং নলচিরা; উক্ত নৌরুটের তিনটি ফেরি ক্রসিং (চাঁদপুর-শরিয়তপুর, লক্ষীপুর-ভোলা এবং ভেদুরিয়া-লাহারহাট) এলাকায় সংরক্ষণ ড্রেজিং; চারটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ ও উন্নয়ন (ঢাকা শ্মশানঘাট, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর এবং বরিশাল) এবং দুটি কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ ও উন্নয়ন (পানগাঁও ও আশুগঞ্জ); নৌকরিডোরটির বিভিন্ন স্থানে (ভৈরব বাজার, আলু বাজার, হরিণা, হিজলা, মজুচৌধুরী, ইলিশা (ভোলা), ভেদুরিয়া, লাহারহাট, বদ্দারহাট, দৌলতখাঁ, চেয়ারম্যানঘাট (চর বাটা), সন্দ্বীপ, তজুমদ্দিন, মনপুরা এবং তমুরুদ্দিন) ১৫টি ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ এবং দুটি মাল্টিপারপাস ভেসেল সংগ্রহ করা হবে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: লঞ্চে ধূমপান না করতে সতর্কীকরণ পদক্ষেপ নেয়া হবে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
এই সরকারের সময়ে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না: নৌপ্রতিমন্ত্রী