বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত দেশগুলোই দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, উন্নত দেশগুলোতে জনপ্রতি গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন অনেক বেশি। ইউরোপে পার ক্যাপিটা পার এরিয়া ১০ টনের বেশি। আমেরিকায় ১৫ টন বা আরও বেশি।
রবিবার সচিবালয়ে মিশরে অনুষ্ঠেয় ‘কপ-২৭’ সম্মেলনকে সামনে রেখে ‘বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা’ নিয়ে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পার ক্যাপিটা পার এরিয়া এখন চার-পাঁচ টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হচ্ছে। সেই তুলনায় আমাদের কিছুই না। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সেটি আমাদের ওপর অন্য দেশের তূলনায় অনেক বেশি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্ত বিরূপ প্রভাব দৃশ্যমান। যেমন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। যারা উপকূলের মানুষ, তারা জানেন, আমি চট্টগ্রাম শহরের ছেলে, সেই কারণে আমিও জানি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি লবণাক্ততা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, হঠাৎ একদিনের অনেক বৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনাগুলো অনেক বেড়ে গেছে। অর্থাৎ ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু সম্পর্কিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
আরও পড়ুন: দুই বাংলার হৃদয়বন্ধন কাঁটাতারের বেড়া মানে না: তথ্যমন্ত্রী
হাছান মাহমুদ বলেন, গ্ল্যাসিয়েল লেক বলতে বরফ গলে যে লেকগুলো তৈরি হয়েছে, সেটাকে বোঝায়। সেখান থেকে উৎপত্তি হওয়া নদীগুলো বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগর দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। তাহলে সেটার যে কী বিরূপ প্রভাব, তা অনুমানেরও বাইরে। সব মিলিয়ে আমরা এই জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকার। পুরো পৃথিবীই শিকার।
এবারের কপ২৭ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, আমাদের এবারকার বক্তব্য থাকবে, যে দয়া করে যুদ্ধটা বন্ধ করুন। একে অপরকে ধ্বংস করার পরিবর্তে সবাই মিলে পৃথিবীটাকে রক্ষা করি। এটি প্রথম বক্তব্য।
দ্বিতীয় বক্তব্যটা হচ্ছে, আমরা যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের অসহায় শিকার, আমরা বহু বছর থেকে বলে আসছি, সেটির পুনরাবৃত্তি আমরা করবো যে কোনও অজুহাত এখানে দাঁড় করানো যাবে না। আমাদের প্রতিশ্রুত সাহায্য করতে হবে।
‘প্যারিস চুক্তির আলোকে যেগুলো হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো এখনো হয়নি। যেমন, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে যে পরিমাণ অর্থ জমার পড়ার কথা ছিল সেটি জমেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমিয়ে আনতে সেই অর্থ সমবণ্টনের কথা ছিল, কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি যেভাবে সমাধান করার কথা ছিল, সেভাবে হচ্ছে না।’
তিনি জানান, আমাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে আমরা চেষ্টা করবো, আমরা যারা পৃথিবীতে শান্তি চাই, শান্তি স্থাপিত হোক। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে পৃথিবী নানা অশান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই যে আড়াই বছর ধরে মহামারি। এরমধ্যে আমরা যুদ্ধ করছি। আমাদের বিবেক-বুদ্ধি কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
মহামারির মধ্যে পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবস্থা নড়বড়ে হয়েছে। কিন্তু আমরা ব্যস্ত নিষেধাজ্ঞা পাল্টা-নিষেধাজ্ঞায়। এতে ডলার শক্তিশালী হয়েছে, পাশাপাশি রুবলও।
কিন্তু আমরা যারা যুদ্ধের বাইরে আছি, আমরা প্রচণ্ড অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের মোকাবিলা করা দরকার, তা বাদ দিয়ে আমরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছি। শুধু মহামারি না, এ বছর দেখেন, বিভিন্ন দেশে বন্যা, খরা ও দাবানল হয়েছে। ইউরোপ, তুর্কি, গ্রিস, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি মাঝে মাঝে সাইবেরিয়ায়।
আমরা ছোটবেলায় পড়েছি, বরফের দেশ সাইবেরিয়ায় এক্সিমোরা থাকে। সেই সাইবেরিয়ায়ও দাবানল হচ্ছে। এই যে পৃথিবীতে বদলে যাচ্ছে। পৃথিবী যে একটি প্রাকৃতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এসব ঘটনার তারই বহিঃপ্রকাশ।
এখন থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা দরকার বলে মনে করেন মন্ত্রী। তার মতে, আমাদের জলবায়ু সচেতনতা প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বেশি আছে।
যদিও সাধারণ মানুষকে অতোটা সম্পৃক্ত করতে পারিনি। কিন্তু যা আছে, তার পেছনে সাংবাদিকদের অবদান আছে।
কপ-২৭ সম্মেলন নিয়ে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জর্জানালিস্ট ফোরাম’ (বিসিজেএফ) এর সভাপতি কাউসার রহমান, সধারণ সম্পাদক মোতার হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: ছাত্রদলের ইন্ধনেই বিচারপতি মানিকের ওপরে হামলা হয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
রুশ রাষ্ট্রদূত আশা করছেন শিগগিরই ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ হবে: তথ্যমন্ত্রী