মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার ১১টা ৫৮ মিনিটে এটি জাতীয় গ্রিডে সমন্বয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬০০ মেগাওয়াট বিশিষ্ট ইউনিট-১ থেকে পরীক্ষামূলক প্রায় ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধীরে ধীরে প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়বে।’
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে ১ হাজার ৪১৪ একর জমিতে দুটি ইউনিট বিশিষ্ট ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিএল) এটি প্রতিষ্ঠা করে।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এর অধীনে জাহাজ থেকে কয়লা খালাসের সুবিধার্থে একটি গভীর সমুদ্র প্রকল্পও তৈরি করা হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে কয়লা খালাসের জন্য ব্যবহৃত জেটির কাজ প্রায় শেষ। জেটিতে জাহাজ চলাচলও শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়া থেকে ৬৪ হাজার টন কয়লা নিয়ে জাহাজ ভিড়েছে মাতারবাড়ীতে
প্রকল্পের কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্লান্টটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দৈনিক প্রায় ১৩ হাজার ১০৪ টন কয়লার প্রয়োজন হবে। এ জন্য কয়লা খালাসের জেটি ও সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে।
বিশাল সাইলোতে ৬০ দিনের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা রাখা হয়েছে। ৮০ হাজার টন ধারণক্ষমতার মাদার ভেসেল সরাসরি কয়লা জেটিতে প্রবেশ করতে পারে। আর মাদার ভেসেল থেকে কয়লা খালাস করতে দেড় থেকে দুই দিন সময় লাগবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২৫ বছরের ছাই সংরক্ষণের জন্য দুটি পৃথক অ্যাশপন্ড রাখা হয়। একটির আয়তন ৯০ একর, অন্যটি ৬০০ একর জুড়ে বিস্তৃত। কয়লা সংরক্ষণের জন্য ৮০ একর জমিতে কোল ইয়ার্ড নির্মাণকরা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে ২০১৪ সালের ১৬ জুন এ প্রকল্পের একটি ঋণচুক্তি সই হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জাইকা এবং বাকি ৭ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার ও সিপিজিসিবিএলের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ী বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ২০২৬ সালে শুরু হবে: খালিদ মাহমুদ
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে জেটি ও ভৌত অবকাঠামোর ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং সার্বিক ভৌত অবকাঠামোর ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা উদ্বোধনের আগে এখান থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করতে চাই। মাতারবাড়ী কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চালু হওয়ার কথা রয়েছে, তবে আমরা আশা করছি এই ডিসেম্বরের মধ্যেই এটি সম্পূর্ণরূপে চালু হবে।’
তিনি আরও বলেন, আগামী জুলাইয়ে দ্বিতীয় ইউনিটটি চালু হবে।
তবে উভয় ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
পরিবেশ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করে প্রকল্পটির কাজ চলছে বলে উল্লেখ করেন নির্বাহী পরিচালক।
তিনি বলেন, ‘জাহাজ থেকে কয়লা আনলোড করলেই কয়লা দেখা যাবে। এরপর জেটি থেকে কয়লা সরাসরি প্ল্যান্টে যাবে। এটি পরিবেশ দূষিত করবে না।’
চলতি বছরের ২৩ জুন ইন্দোনেশিয়া থেকে মাতারবাড়ি প্ল্যান্টের জন্য ৬৪ হাজার ৩০০টন কয়লা বহনকারী একটি জাহাজ বাংলাদেশে আসে।