নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে বাড়ি থেকে টাকা ও স্বর্ণ লুট করতেই মা ও অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে হত্যা করেছেন অভিযুক্ত যুবক আল জোবায়ের (২৬)। তার বরাত দিয়েই নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু এ তথ্য জানিয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জোবায়ের পুলিশের কাছে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জোবায়েরের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের বিচারিক হাকিম নূর মহসিনের আদালতে অভিযুক্ত জোবায়েরকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত শুনানি শেষে তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে অভিযুক্ত জোবায়েরকে আসামি করে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত রুমা চক্রবর্তীর স্বামী রামপ্রসাদ চক্রবর্তী।
গ্রেপ্তার জোবায়ের শহরের পাইকপাড়ার আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটন, এই ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা জানতে জোবায়েরকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়। আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আরও পড়ুন: মসজিদে নামাজরত মুসল্লিকে হামলা: আসামি বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু বলেন, ‘জোবায়েরকে আমরা ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, তার নিজের চলার জন্য টাকা দরকার। এ কারণে নিতাইগঞ্জের সবচেয়ে বড় বাড়িটি তিনি টার্গেট করেন। ছয়তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে কলিংবেল বাজিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই ফ্ল্যাটের কেউ দরজা খোলেননি। তখন পাশের রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর ফ্ল্যাটে কলিংবেল চাপেন তিনি। ওই ফ্ল্যাটের দরজা খুললে ভেতরে ঢুকে রুমা চক্রবর্তীর গলা চেপে ধরেন জোবায়ের। এ সময় রুমার গলার মালা ছিনিয়ে নেন। এরপর ছুরি মেরে রুমাকে হত্যা করেন। রুমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ঋতু চক্রবর্তী এগিয়ে এলে তাকেও ছুরি মেরে হত্যা করেন জোবায়ের।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘জোবায়ের বলেছেন যে পাশের রুমে রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর ছেলের বউ শীলাকে বঁটি দিয়ে কোপাতে গেলে তিনি ধাক্কা দেন। এতে জোবায়ের ঘরের মেঝেতে থাকা রক্তে পা পিছলে পড়ে যান। তখন শীলা দৌড়ে বঁটি নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসেন। জোবায়েরও নিচে নেমে আসেন। শীলার হাতে বঁটি ও নিচে অনেক লোক দেখে জোবায়ের আবার ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে। ’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন,এ ঘটনায় অভিযুক্ত জোবায়েরকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য,গত মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জের একটি বহুতল ভবনের ছয়তলার ফ্ল্যাটে ঢুকে মা ও সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে হত্যার ঘটনা ঘটে। এসময় অভিযুক্ত জোবায়েরের ব্যাগ থেকে দুটি সোনার মালা ও কানের দুল উদ্ধার করা হয়। জোবায়ের ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। পরে আর্থিক সমস্যার কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তিনি।