ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় ৩১৯ অবৈধ ইটভাটা থাকার কথা আদালতকে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল হামিদ। ঢাকা ছাড়া বাকি চার জেলা হচ্ছে- গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ।
বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে যুক্ত হয়ে এ তথ্য তুলে ধরেন তিনি। এসময় ঢাকা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসকও ভার্চুয়ালি আদালতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শুনানির পর অবৈধ ইটভাটার তালিকা হলফনামা আকারে রাষ্ট্রপক্ষকে দাখিল করার নির্দেশ দিয়ে আদালত আগামী বুধবার পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করিম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী মো. শাহজাহান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা এবং বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান। আর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
ঢাকায় বায়ু দূষণ ও অবৈধ ইটভাটা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে গত ৩০ জানুয়ারি একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি সে আবেদনের শুনানির পর ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের আগের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ না থাকায় সংশ্লিষ্ট পাঁচ জেলার (ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর) জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ডাকেন হাইকোর্ট।
অবৈধ ইটভাটার তালিকা নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়াল আদালতে তাদের যুক্ত থাকতে বলা হয়েছিল। এছাড়া বায়ু দূষণ রোধে গত দুই মাস (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রম্যমাণ আদালত কী কাজ করেছে, তার একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে। বায়ু দূষণ সংক্রান্ত চলমান একটি রিটে সম্পূরক আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর এ আদেশ হয়েছিল। নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের পক্ষে আরডিসি আদালতে যুক্ত হন। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক বা তার পক্ষে কোনো প্রতিনিধি আদালতে ছিলেন না।
শুনানির শুরুতেই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান আদালতে জেলা প্রশাসককে যুক্ত থাকার তথ্য দিয়ে বলেন, সব জেলা (পাঁচ জেলা) থেকে তালিকা এসে পৌঁছায়নি। সব তালিকা আসার পর সেগুলো হলফনামা করে আদালতে উপস্থাপন করা হবে। এরপর আদালত তিন জেলা প্রশাসকের বক্তব্য শোনেন। পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল হামিদ আদালতে বলেন, অবৈধ ইটভাটার তালিকা আদালতে পাঠানো হয়েছে। ৩১৯টি ইটভাটা অবৈধ। পরিবেশ অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৯৫টি ইটভাটার কার্যক্রম একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী ৫ জেলার অবৈধ ইটভাটার তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
আদালত কার্যক্রম পরিচালনা পদ্ধতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট থাকেন। ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা সহায়তা করেন। অন্য জেলায় যখন যাই, তখন পুলিশ ফোর্স নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকর্মীদের নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকেন।
শুনানির পর বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, তালিকা পাওয়ার পর সব বিষয় আমরা শুনব। শুনে যথাযথ আদেশ দেব। আগামী বুধবার পরবর্তী শুনানির দিন রাখা হল। এর আগে, ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) পক্ষে রিট আবেদন করা হয়।
ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ওই বছর ২৮ জানুয়ারি আদালত রুলসহ আদেশ দেন। ঢাকা শহরে যারা বায়ু দূষণের কারণ সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সপ্তাহে দুই বার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সেদিন নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া রাজধানীর যেসব জায়গায় উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে, সেসব জায়গা ওই আদেশের ১৫ দিনের মধ্যে এমনভাবে ঘিরে ফেলতে বলা হয়েছিল যে, যাতে শুকনো মৌসুমে ধুলো ছড়িয়ে বায়ু দূষণ বাড়তে না পারে। পাশাপাশি ‘ধুলোবালি প্রবণ’ এলাকাগুলোতে দিনে অন্তত দুই বার করে পানি ছিটাতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। এসব নির্দেশনার পাশাপাশি আদালত সেদিন রুলও জারি করেছিলেন। ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ রোধে প্রশাসনের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে।
বন ও পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিএমপি কমিশনার, রাজউকের চেয়ারম্যানসহ ১১ বিবাদিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। এই আদেশের তিন মাস পর পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন আদালত।
আরও পড়ুন: দিনাজপুর ও মৌলভীবাজারের লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ
পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলার লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা সাত দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ