তিনি বলেন, ‘খেলার মাঠ শুধু খেলার জন্যই উন্মুক্ত থাকবে। ঢাকা দক্ষিণের কোনো খেলার মাঠে আর কখনো কোরবানির পশুর হাট বসবে না। এসব মাঠ শুধু শিশু, কিশোর, তরুণসহ সব বয়সীদের খেলার জন্য ব্যবহার করা হবে। বয়স্করা যাতে মাঠে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন, এখন থেকে তেমন কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’
সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। মুজিব জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে ‘আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-১৪২৭’ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, অনেক মাঠ দখল হয়ে গেছে, সংকুচিত হয়ে গেছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো উদ্ধার করা হবে। ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ করার পরিকল্পনা নিয়েই আমাদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছি। আমাদের ইচ্ছা আছে, প্রতিটি ওয়ার্ডে যাতে একটি করে খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠা করা যায়,’ বলেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ এবং পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে উল্লেখ করে তাপস বলেন, জাতির পিতা যেমন বীরদর্পে বাঙালি জাতির অধিকারের জন্য লড়েছেন তেমনি ক্রীড়াঙ্গনেও তার বীরদর্প পদচারণা ছিল। তিনি ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। একইভাবে তার সুযোগ্য সন্তান শহীদ শেখ কামাল ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
‘স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছেন, তার সার্বিক সহযোগিতায় দেশের ক্রীড়াঙ্গন আজ এক অনন্য উচ্চতায় অবস্থান করছে। সেজন্যই, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষে ক্রীড়ামোদী বঙ্গবন্ধুকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একযোগে ৭৫টি ওয়ার্ডে প্রথমবারের মত আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-১৪২৭ আয়োজন করতে যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।
ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে এই প্রথম আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার ওয়ার্ডভিত্তিক ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা হবে। আগামী বছর থেকে খেলার পরিসর বাড়িয়ে পাঁচটি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। বাকি তিনটি খেলা হলো বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন ও কাবাডি।
আরও পড়ুন: তাপস মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন: সাঈদ খোকন
সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মামল
তাপস জানান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্য হতে প্রথমবারের মতো আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ৬৩টি ফুটবল দল ও ৬৪টি ক্রিকেট দল অংশ নিচ্ছে। ঢাকার ১৩টি মাঠে এই খেলা অনুষ্ঠিত হবে।
আয়োজন ছোট হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সম্পৃক্ত হওয়ায় আয়োজনের কলেবর সমৃদ্ধ হয়েছে বলে জানান ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস।
তিনি বলেন, এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ওয়ার্ড থেকে খেলোয়াড় তৈরির উদ্যোগের সূচনা হতে যাচ্ছে। ওয়ার্ডভিত্তিক এই আয়োজনের মধ্য দিয়েই জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের বাস। কিন্তু সেই অর্থে ঢাকা থেকে খেলোয়াড় বের করা যায়নি। দীর্ঘদিন এ বিষয়ে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা ছিল না। আমরা সেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর ফলে ওয়ার্ডভিত্তিক অনেক খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। এখান থেকেই জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড় তৈরি শুরু হবে।
আরও পড়ুন: ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে জনঘনত্ব নির্ধারণে পরিকল্পনা হচ্ছে: মন্ত্রী তাজুল
‘করোনার কারণে আমাদের সন্তানরা দীর্ঘদিন ঘর বন্দি ছিল। আমাদের সন্তানদের আবারো খেলার মাঠ ফিরিয়ে দেব। এ কারণেই আমাদের এই আয়োজন। এখন থেকে প্রতিবছর আমরা এই আয়োজন করব,’ বলেন মেয়র।
অনুষ্ঠান শেষে ডিএসসিসি মেয়রকে মধুমতি ব্যাংক এক কোটি টাকার চেক এবং ওরিয়ন গ্রুপ ২৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করে। পরে লটারির মাধ্যমে ক্রিকেট এবং ফুটবল দলের খেলার সূচি নির্বাচন করা হয়।
আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী এবং একই ভেন্যুতে আগামী ১৫ মার্চ সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি ফুটবল এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ক্রিকেট খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে। উভয় খেলার সমাপনী অনুষ্ঠিত হবে ১৫ মার্চ। ফুটবলের উদ্বোধনী এবং ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে, পাশাপাশি ক্রিকেটের উদ্বোধনী এবং ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আউটার স্টেডিয়ামে। ক্রিকেট ও ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন দলকে পাঁচ লাখ টাকা করে পুরস্কার দেয়া হবে। উভয় ক্ষেত্রে রানার-আপ দল পাবে তিন লাখ টাকা পুরস্কার। এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় স্পন্সর হিসেবে মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড এবং কো-স্পন্সর হিসেবে ওরিয়ন গ্রুপ সহযেগিতা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী, দক্ষিণ সিটির ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ, মধুমতি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজম, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক ও দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং সংস্থার অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: রাজধানীর খাল-কালভার্ট পরিষ্কারের কাজ অত্যন্ত দুরূহ: ডিএসসিসি মেয়র
সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই প্রকল্প নেয়া হয়েছিল: ডিএসসিসি মেয়র
প্রকল্পের টাকা নয়-ছয় হোক চাই না: ডিএসসিসি মেয়র
খেলার জন্য আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ উন্মুক্ত করা হবে: ডিএসসিসি মেয়র