ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তবে, ছাত্রদলের বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সমাবেশে বহিরাগতদের অংশগ্রহণ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাংবাদিকদের হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (১৪ মে) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিলটি শুরু হয়। মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বর, মধুর ক্যান্টিন, কলাভবন হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে, সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মী ছাড়াও নিউমার্কেট থানা, তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল কলেজসহ মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দুইজন সদস্যকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী এক সাংবাদিক জানান, ‘ভিসি চত্বরে অবস্থানকালে তিনি বন্ধুর সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। হঠাৎ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রফিকউল্লাহ এসে তাকে মারধরের হুমকি দেন। তাৎক্ষণিক আরেক সাংবাদিক প্রতিবাদস্বরূপ রফিকউল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠিক সম্পাদক আবু সাইদ তার পথরোধ করেন। এরপর সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও ওই প্রতিবেদককে ধাক্কাধাক্কি ও গালিগালাজ করেন সাইদ।
এদিকে, বহিরাগত দুর্বৃত্তদের হাতে ঢাবি ছাত্র নিহতের প্রতিবাদ মিছিলে বহিরাগতের অংশগ্রহণ-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
এ নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রিপন মিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে বহিরাগতদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী প্রাণ হারালেন, সেই বহিরাগতকেই আবার এই প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হলো কেন? আপনারা বুঝতে পারেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্নিহিত স্পন্দন—এই ক্যাম্পাসের হৃদয়ের স্ফুলিঙ্গকে ধরতে আপনাদের ব্যর্থতা পরিষ্কার।’
আরও পড়ুন: দাবি আদায় না-হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের
আরেক শিক্ষার্থী হুসাইন আহম্মেদ লিখেছেন, ‘যে বহিরাগতদের কারণে সাম্য ভাই খুন হলো, সেই বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে এনে ছাত্রদল সাম্য হত্যার প্রতিবাদ করছে—বাহ!’
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাম্য হত্যাকাণ্ডের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিক মিছিল করে ছাত্রদল। এ সময় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভকারীরা উপাচার্যকে হেনস্তা করছেন–এমন অভিযোগ উঠেছে।
একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রদলের মিছিলটি পৌঁছালে বাসার ভেতর থেকে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বেরিয়ে আসেন। তখন একদল বিক্ষোভকারী তার দিকে তেড়ে আসেন। উত্তপ্ত মুহূর্তে ভিসিকে বলতে শোনা যায়, ‘মার, আমাকে মার।’
ওই বিক্ষোভে বেশ কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ এসেছে।
এ নিয়ে ঢাবি শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলের এক পোস্টে লিখেন, ‘গতকাল রাত ১টা ৪৫ মিনিটে সাম্য ভাইয়ের হত্যার প্রতিবাদে আমরা শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করি। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যে পৌঁছালে ছাত্রদলের কয়েকজন এসে আমাদের ভিসির বাসভবনের সামনে যাওয়ার আহ্বান জানায় এবং দাবি করে আমাদের তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করতে হবে। আমি অস্বীকৃতি জানালে তারা হট্টগোল শুরু করে এবং ‘ফুটেজখোর’ বলে গালাগালি করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’
তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে গালি শুনতে হয়েছে বলেও অভিযোগ তার।
এসব অভিযোগে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও উত্তর পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। সাম্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।