নড়াইলের মধুমতি নদীতে বাংলাদেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মধুমতি সেতু নামেও পরিচিত ৬৯০ মিটার এই সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
নিলসেন-লোহসে আর্চ ধরনের এই সেতুর মাধ্যমে দেশের গোপালগঞ্জ, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, সাতক্ষীরা ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। নিলসেন-লোহসে ব্রিজ হল বাঁধা খিলান সেতু,যেখানে বন্ধনীযুক্ত তারগুলো একে অপরকে অতিক্রম করে এবং ইন্টারসেকশন ক্ল্যাম্প দ্বারা সংযুক্ত থাকে।
৬৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২৭ দশমিক এক মিটার প্রস্তের সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ। সেতুর দুই পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এর অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
টোল হার নির্ধারণ
মধুমতি সেতু কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে সেতু পারাপারে বিভিন্ন যানবাহনের জন্য টোলের হার নির্ধারণ করেছে।
বড় ট্রেইলার ৫৬৫ টাকা, তিন বা ততোধিক এক্সসেলবিশিষ্ট ট্রাক ৪৫০ টাকা, দুই এক্সসেল বিশিষ্ট মিডিয়াম ট্রাক ২২৫ টাকা, ছোট ট্রাক ১৭০ টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫ টাকা, বড় বাস ২০৫ টাকা, মিনিবাস বা কোস্টার ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকাপ, কনভারশন জিপ ও রে-কার ৯০ টাকা, প্রাইভেট কার ৫৫ টাকা, অটোটেম্পু, সিএনজি অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিনচাকার যান ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা এবং রিকশা, ভ্যান ও বাইসাইকেল পাঁচ টাকা হারে টোল দিতে হবে।
প্রথমে টোল ম্যানুয়ালি আদায় করা হবে। পরবর্তীতে অপারেটরের মাধ্যমে ডিজিটালভাবে টোল আদায় করা হবে।
ফাঁকা জায়গায় সংযোগ স্থাপন
কালনাঘাট থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার। কালনা সেতু চালু হলে ঢাকা ও আশপাশের নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশপাশের এলাকার যাতায়াতে ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার কমে আসবে।
সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল ও কলকাতার সড়ক যোগাযোগে সরাসরি ভূমিকা রাখবে। মধুমতি নদী কালনা পয়েন্ট এসব রুটের মাঝখানে পড়েছিল যেখানে এরআগে সেতু করা হয়নি।
সেতুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় সংযোগকে ভূমিকা রাখবে এবং ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল এবং নোয়াপাড়া সামুদ্রিক বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করার মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
নড়াইলের লোহাগড়ায় ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চালু হলে ব্যবসার প্রসার ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, নোয়াপাড়া শিল্পনগর, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ও আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষের জন্য কালনা সেতু পদ্মা সেতুর চেয়েও বড় আশীর্বাদ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কালনাঘাট পয়েন্ট থেকে ফেরিতে করে মধুমতি নদী পার হতে যানবাহনকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার অবসান হলো এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে।
পড়ুন: তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
আ.লীগ দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে: শেখ হাসিনা