২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পরেও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডস লিমিটেডের সাততলা কারখানায় আগুন নেভাতে পারেননি দমকলকর্মীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে এই আগুনের সূত্রপাত। শুক্রবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ তে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ কল কারখানাগুলোতে কাজের নিরাপদ পরিবেশ নেই: বিএনপি
এই বিপর্যয়ের বিশদ বিবরণ প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে এটি স্পষ্ট হচ্ছে যে শ্রমিকদের এই আগুন থেকে বাঁচার কোন পথ ছিল না। ভবনের প্রতিটি তলা ঘি, মাখন, তেল, পলিথিনের মতো দাহ্য পদার্থে ভর্তি ছিল, যা থেকে আগুন এতো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল। যদি নির্মাণ নীতিমালা মেনে ভবনটিতে জরুরি বহির্গমন পথ রাখা হতো তাহলে হয়তো এতো প্রাণহাণি হতো না। এছাড়া ভবনটির প্রতি তলার কলাপসিবল গেটে তালা দেয়া ছিল। ২০১২ সালে আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডেও এই একই কারণে প্রাণহানির ঘটনা বেশি হয়েছিল। ওই অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১১২ জন নিহত হয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ নারায়ণগঞ্জে জুস কারখানায় ভয়াবহ আগুন, ৫২ লাশ উদ্ধার
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন ইউএনবিকে নিশ্চিত করেছেন যে উদ্ধারকর্মীরা ভবনের চতুর্থ তলার কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে লাশগুলো উদ্ধার করেন। সেখানেই তাঁরা পুড়ে যাওয়া ৪৯ টি লাশ পান।
লাশগুলো চেনার কোন উপায় ছিল না। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারি জানিয়েছেন, সনাক্ত করার জন্য লাশগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এরপর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ইতোমধ্যে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ নারায়নগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে দোষীদের শাস্তি দাবি বিরোধীদলীয় নেতার
এর আগে ঢামেক এবং রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা আগুন থেকে বাঁচার জন্য ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কাজী রফিকুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে কারখানার বেশিরভাগ ইউনিট বন্ধ ছিল। কয়েকটি বিভাগ খোলা ছিল। ভবনের একাধিক তলা গোডাউন হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তবে ঘটনার সময় কে বা কারা গেটে তালা দিয়েছিল সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
আরও পড়ুনঃ নারায়ণগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানিতে রাষ্ট্রপতির গভীর শোক
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, ভবনের বিভিন্ন তলার গেট তালাবদ্ধ থাকায় উদ্ধার কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যদি তালাবদ্ধ না থাকতো, তবে এতো বেশি প্রাণহানি হতো না।
সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আবুল হাশেম কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের দায়-দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।