পদ্মা সেতু কোরবানির আয়োজনে অভাবনীয় সুযোগ তৈরি করেছে এবং কোরবানিকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
শুক্রবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা: দেশীয় পশুতে কোরবানি, খামারিদের সমস্যা ও করণীয়' -বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।
এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, আত্মবিশ্বাস, সততা, দৃঢ়তা ও দেশপ্রেমের অকল্পনীয় সিদ্ধান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছে পদ্মা সেতু।
তিনি বলেন, এ সেতু আমাদের বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কোরবানির পশু নিয়ে এক সময় ঘাটে এসে দুই-তিনদিনও অপেক্ষা করতে হতো। পদ্মা সেতু দিয়ে যারা ঢাকা ও দেশের অন্যান্য জায়গায় কোরবানির পশু নিয়ে আসবেন তাদের জন্য পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এতে একদিকে যেমন কোরবানির জন্য সম্প্রসারিত জায়গা হচ্ছে, অপরদিকে রাস্তা-ঘাটে ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হচ্ছে না। দেশের প্রান্তিক পর্যায় থেকে ঢাকা বা ঢাকা থেকে অন্যত্র পশু পারাপারে এখন ফেরি পার না হলেও চলে। ফলে ফেরিঘাটকেন্দ্রিক খামারিদের বিড়ম্বনা এখন নেই। পদ্মা সেতুর কারণে কোরবানির পশু পারাপার সহজ হয়েছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় সম্পদ, বিরোধীরা জাতির শত্রু: হাইকোর্ট
তিনি আরও বলেন, এ বছর আমরা নিয়ম করে দিয়েছি, যিনি কোরবানির পশু নিয়ে আসবেন তিনি পশু ঢাকায় না সিলেটে কোথায় বিক্রি করবেন সেটা তার ব্যাপার। পথে কোন বাজারে তাকে পশু নামাতে জোর করা যাবে না। খামারিদের আরেকটি সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, বাড়িতে বা রাস্তায় পশু বিক্রি করলে তাদের কোনো হাসিল দিতে হবে না। কেউ খামারিদের বাজারে এনে পশু বিক্রিতে বাধ্য করতে পারবে না। কোরবানির পশু বাড়িতে বিক্রি করলে নিকটবর্তী বাজার ইজারাদার চাঁদা আদায়ের কথা বলতে পারবে না।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, রাস্তাঘাট অথবা যেখানে যান চলাচলে বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি হয় সেখানে কোন পশুর হাট বসতে পারবে না। নির্ধারিত জায়গায় হাট বসবে। প্রতিটি স্বীকৃত হাটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি মেডিকেল ব্যবস্থাপনা থাকবে, যাতে অস্বাস্থ্যকর ও রোগগ্রস্ত পশু কেউ যেন সামনে নিয়ে না আসে অথবা সেটা বিক্রি যেন না হয়। হাটে বিনামূল্যে পশু পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও এবারের গরুর হাটে আর্থিক লেনদেনের জন্য স্মার্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকবে। এভাবে ক্রেতা-বিক্রেতা ও ভোক্তার জন্য একটি নিরাপদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে।
মন্ত্রী বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এবার বৃহত্তর সিলেট ও ঢাকার একটি অংশে প্রাণিসম্পদ খাতে যে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, সেটা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রণোদনা দিয়ে খামারিরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে এবং এ খাত যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, বৃহত্তর সিলেটে স্মরণাতীতকালের বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস হলেও পশু মৃত্যুর সংখ্যা বিশাল নয়। তারপরও ওই অঞ্চলের ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে বরিশালসহ দেশের অন্যান্য এলাকার উদ্বৃত্ত পশু এ সব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিপণনের জন্য উৎপাদকদের নিয়ে যেতে হবে। পশু পরিবহনে পথে কোন বাধা থাকবে না। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে দ্রুততার সাথে এক অঞ্চলের পশু অন্য অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া এখন সহজ। এক্ষেত্রে খামারিদের এগিয়ে আসতে হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সমস্যা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে বলেও এ সময় জানান মন্ত্রী। এ সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়ার বিষয়টিও আশ্বস্ত করেন তিনি।
ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি এম এ জলিল মুন্না রায়হানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিউল আহাদ ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম সুমন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: খুলনার পর্যটন শিল্পের দুয়ার উন্মোচন
পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানালেন দ. এশীয় নেতারা