পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা দেয়া 'ফেরি কাকলী'র ভারপ্রাপ্ত মাস্টার ও সুকানিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। শুক্রবার অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে।
বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা হলেন, ফেরির ভারপ্রাপ্ত মাস্টার মো. বাদল হোসেন এবং সুকানি আব্দুর রশিদ।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া-মাদারীপুরের বাংলাবাজার রুটে চলচলারত 'ফেরি কাকলী' সঠিকভাবে পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় উক্ত ফেরির ভারপ্রাপ্ত মাস্টার মো. বাদল হোসেন এবং সুকানি আব্দুর রশিদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাওয়ার সময় কে-টাইপ ফেরি ‘কাকলী’ পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। কাকলীর ধাক্কায় পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপের সামান্য কিছু অংশের কংক্রিট উঠে গেছে। এতে সেতুর তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি। তারপরও এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। ফেরিতে থাকা যাত্রী ও যানবাহনের বড় ক্ষতি হতে পারতো। এটা অত্যন্ত দু:খজনক।
ফেরি কাকলীর চালক মো. বাদল হোসেন জানিয়েছিলেন, ফেরিটি পদ্মা সেতুর ১১-১২ পিলারের মাঝখান দিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু নদীর প্রচন্ড স্রোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির একপাশে ফাটল ধরে। তবে ফাটল পানির স্তরের উপরে থাকায় ফেরিতে পানি ওঠেনি। পদ্মা সেতুর পিলারেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। ধাক্কা লাগার পর ফেরিটি নিরাপদে শিমুলিয়া ঘাটে নিয়ে আসা হয়েছে। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রচন্ড ধাক্কায় সেতুর ১০ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপের কংক্রিট উঠে যায়। ফেরিতে থাকা এক যান আরেক যানকে ধাক্কা দেয়। অনেকেই পড়ে যান। এই সময় ফেরিটিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা ষড়যন্ত্র কি না তদন্ত করতে হবে: সেতুমন্ত্রী
পদ্মা সেতুর পিলারে বারবার ফেরির ধাক্কা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। সেতুর খুঁটি উঠে যাওয়ার পর কয়েক বছর ধরেই পদ্মা সেতুর নিচ দিয়েই ফেরিসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল করছে। তবে এ বছর কেন বারবার পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটছে।
এর আগে গত ৯ আগস্ট রাতে রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে আঘাত করে। এতে ফেরিতে থাকা দু’টি প্রাইভেটকার ও একটি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফেরির ৫ যাত্রী আহত হন। এ ঘটনায় পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ লৌহজং থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে এবং ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার ও হুইল সুকানীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া মঙ্গলবার যুগ্ম সচিব ও বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (কারিগরি) রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। কমিটি রিপোর্ট দেয়ার আগেই ফেরি আবার পদ্মা সেতুর খুঁটিতে আঘাত করল।
এছাড়া গত ২৩ জুলাই নির্মাণাধীন পদ্মা বহুমুখী সেতুর ১৭ নম্বর পিলারের সঙ্গে ‘শাহজালাল’ নামে রো রো ফেরির সংঘর্ষ হয়। এতে ফেরিটির কমপক্ষে ২০ জন যাত্রী আহত হন।
ওই ঘটনার পরও ফেরির ইনচার্জ ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার আব্দুর রহমান ও সুকানী সাইফুল ইসলামকে বরখাস্ত করে বিআইডব্লিউটিসি।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুতে আঘাত লাগলে দেশের মানুষের হৃদয়ে আঘাত লাগে: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী