সোমবার মন্ত্রিপরিষদের সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলেন, ‘এবারের বন্যা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। জনগণের যে কোনো ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হলে তাদের সহায়তা করার জন্য প্রশাসনকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি মন্ত্রিসভার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা সচিবালয় থেকে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে এমন বন্যার বিষয়ে (প্রশাসনকে) সজাগ থাকতে হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে সব ধরণের ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা ও ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। যাতে যেখানে আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব রয়েছে সেখানে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থরা আশ্রয় নিতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘বন্যার সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগসমূহের অধীনে থাকা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিশেষত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মাদরাসা শিক্ষা, পরিবার কল্যাণ এবং কৃষিকাজে কর্মরত মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মচারীদের অবশ্যই তাদের কর্মক্ষেত্রে থাকতে হবে।’
ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বৈঠকে অনির্ধারিত দীর্ঘ আলোচনার সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে কী করণীয়, তাও বলেছেন তিনি।’
তিনি বলেন, ‘এজন্য মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের একটা ব্যবস্থা আছে, তারপরও একটা আলাদাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে, বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া আছে। কারণ আভাস আছে পানি নামতে দেরি হতে পারে, যদিও এখন পানি নেমে যাচ্ছে।’
কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বাভাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলা ভাদ্র মাসের শুরু থেকে বন্যার পানি দীর্ঘ সময়ের জন্য আটকে যেতে পারে কারণ বিশ্ব জলবায়ু পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরসহ কতগুলো সাগরের পানির উচ্চতা এ সময়টাতে বেড়ে যাচ্ছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য নেয়া পুনর্বাসন কর্মসূচি কার্যকর ও সময়মতো বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করারা কথা বলেছেন।
১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে বন্যার পরে ফসলের বাম্পার ফলনও দেখা গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বন্যা দীর্ঘায়িত হলে বন্যার কারণে আমনের (রোপা আমান) উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, এমনকি বন্যার মধ্যেও, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং পানির জন্য দেশের উত্তরাঞ্চলের উচু জমিতে আমনের ভাল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও বন্যার কারণে নিম্নাঞ্চলের ফসলের ক্ষতি হয়ে থাকে।
এ সভায় কৃষিমন্ত্রী বন্যা ও বন্যা পরবর্তী সময়ে ফসলের উৎপাদন (আমন ও টি-আমন) সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন, বলেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তবে, প্রধানমন্ত্রী সকলকে টি-আমন ফসলের উৎপাদনে মনোযোগী হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন যাতে আমরা পলি মাটির (বন্যা পরবর্তীকালীন) সম্পূর্ক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারি এবং সাম্প্রতিক বোরো মৌসুম সময়ে ফসলের ভাল ফলন পাওয়ায় অতিরিক্ত শস্য রয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই এটির (বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ কার্যক্রম) তদারকি করছেন,’ বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।