প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কারণে এ বাহিনী এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও যুগোপযোগী।
তিনি বলেন, ‘আজকের বিমান বাহিনী অবকাঠামো, কৌশল ও প্রযুক্তির দিক থেকে অতীতের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী,আধুনিক ও কর্মতৎপর।’
বৃহস্পতিবার যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (বিএএফ) একাডেমির রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ (শীতকালীন) ২০২২-এ ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে ১০ জন ফ্লাইট ক্যাডেট পিটি-৬ এয়ারক্রাফটে প্রাথমিক উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ সফলভাবে সমাপ্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ফ্লাইং ব্যাজ গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর জনসভার জন্য প্রস্তুত যশোর
এছাড়াও, ৮১ তম বাফা কোর্সের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা পারফরম্যান্সের জন্য একজন ফ্লাইট ক্যাডেট সোর্ড অফ অনার অ্যান্ড কমান্ড্যান্টস ট্রফি এবং অন্য দুইজন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ট্রফি ও চিফ অব এয়ার স্টাফ ট্রফি পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তার সরকার বিমান বাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান, সর্বশেষ এভিওনিক্সযুক্ত সি-১৩০জে পরিবহন বিমান, এমআই-১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার এবং সামুদ্রিক অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার বিমান বাহিনীর বহরে অন্তর্ভুক্ত করা।
তিনি বলেন, ‘এজন্য আমাদের বিমান বাহিনী আজ একটি চৌকস ও দক্ষ বাহিনী।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের জন্য দেশ ও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ গড়ে তুলতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশ ও জনগণের প্রতি আপনাদের দায়িত্ববোধ থাকতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা দুর্ঘটনায় বিমানবাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের সেবা করেছেন।
আরও পড়ুন: জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় সশস্ত্র বাহিনীকে সাধুবাদ জানালেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতিতে বিশ্বাসী। আমাদের প্রতিটি দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে হবে, প্রশিক্ষণ নিতে হবে ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতি-১৯৭৪ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার সরকার সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করেছে, যা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন যে আওয়ামী লীগ সরকার লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে এবং এয়ার ডিফেন্স নোটিফিকেশন সেন্টারের কার্যক্রম শুরু করেছে।
তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নিজস্ব জনবল ও অর্জিত প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষামূলক উড়োজাহাজ ও মনুষ্যবিহীন আকাশযান নির্মাণের একটি প্রকল্প চলছে। আমি মনে করি আমাদের জন্য একটি নতুন যুগ উন্মোচিত হবে (বিমান উৎপাদন শিল্পের ওপরে), যদি আমরা এটি করতে পারি (প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে পারি)।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বিমান বাহিনীর সদস্যদের সামগ্রিক দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ সুবিধার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ওপর সবসময় জোর দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উন্নত ও সময় উপযোগী প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক ফ্লাই-বাই-ওয়্যার ও ডিজিটাল ককপিটযুক্ত সর্বশেষ ইয়াক-১৩০ যুদ্ধ প্রশিক্ষক, কে-৮ডব্লিউ জেট প্রশিক্ষক, এল-৪১০ পরিবহন প্রশিক্ষক, এডব্লিউ১১৯কেএক্স হেলিকপ্টার প্রশিক্ষক এবং বিভিন্ন সিমুলেটর বিমানবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে সাম্প্রতিক সংযোজন ছিল গ্রোব প্রশিক্ষণ বিমান। এই অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ বিমান দিয়ে প্রাথমিক ফ্লাইট প্রশিক্ষণ শুরু হবে। রাতে বিমান বাহিনীর পাইলটদের ফ্লাইং ট্রেনিংয়ের সুবিধার্থে নাইট ভিশন প্রশিক্ষকও যুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আ. লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের অনেক পরিবর্তন হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সরকার হেলিকপ্টার সিমুলেটর ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং এয়ারম্যান ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সাংগঠনিক কাঠামো ও সম্প্রতি এয়ার কমান্ড অপারেশন সেন্টারের সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফলে আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিখুঁত হয়ে উঠেছে এবং দেশের আকাশসীমায় বিমানের বিস্তৃত ক্রিয়াকলাপ নিরীক্ষণ করা সহজ হয়েছে। শুধু অপারেশন ও প্রশিক্ষণ নয়, আমরা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সকল কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য বহুমুখী কল্যাণমূলক উদ্যোগ নিয়েছি।
উত্তীর্ণ ক্যাডেটদের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাদারিত্ব অর্জনের জন্য সচেষ্ট হতে বলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিএএফ একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণের পাশাপাশি ফ্লাই-পাস্ট ও অ্যারোবেটিক প্রদর্শন উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।