ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকা এখন বেশ সরগম। এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা অনেকটা একচেটিয়া অবস্থানে রয়েছেন। এদিকে বাগেরহাটে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের ৩৯ জন প্রার্থী এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নানাভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় জেলার তিন উপজেলায় ২২ জন নেতাকর্মীকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাগেরহাটের ৬৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিন হাজারেরও বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব প্রার্থীরাই বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ইউপি নির্বাচন: প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা
শনিবার দিনভর বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রার্থীদের প্রচারণা। বাড়ি থেকে হাট-বাজার কিংবা চায়ের দোকান সর্বত্রই আলোচনা চলছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে। জনসমাবেশ এবং মিছিলসহ নানাভাবে প্রচারণা ছিল প্রার্থীদের।
ভোটাররা বলছেন, যতই প্রচার-প্রচারণা হউক না কেন, তারা যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে ইউনিয়ন পরিষদে পাঠাতে চায়। ৬৫টি ইউপির মধ্যে ফকিরহাট, রামপাল এবং মোংলা উপজেলার চারটি ইউপিতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেয়া হবে। বাকি ৬১টি ইউপিতে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাররা তাদের ভোট দিবেন।
বাগেরহাটের ৯টি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সংশি¬ষ্ট রিটানিং অফিসাররা বেসরকারি ভাবে তাঁদের বিজয়ী ঘোষণা করেন।
বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ভূঁইয়া হেমায়েত উদ্দিন জানান, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করে বিদ্রোহী প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ নেয়ায় বাগেরহাটের তিন উপজেলায় ২৩ জন নেতাকর্মীকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নে ১৭ জনকে, চিতলমালী উপজেলায় চারটি ইউনিয়নে চারজনকে এবং কচুয়া উপজেলায় দুইজন রয়েছেন।
আরও পড়ুন: ইউপি নির্বাচন: ভোলায় গুলিতে যুবক নিহত
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার লকপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে এমডি সেলিম রেজা, জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মো. ইমরান শিকদার এবং আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গাজী মো. গিয়াস উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিজয়ের ব্যাপারে তিনজনই শতভাগ আশাবাদী।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের নির্বাচিত চেয়ারম্যান শেখ মহিতুর রহমান পল্টন জানান, এলাকায় তার জনপ্রিয়তার কারণে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চায়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় এলাকার জনগণের কাছে তার দ্বায়বদ্ধতা আরও বেড়ে গেছে। এই দ্বায়বদ্ধতার কারণে সব সময় জনগণের পাশে থাকবেন এবং এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন অফিস জানায়, বাগেরহাট জেলার ৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৬৫টিতে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৩৯টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের একক প্রার্থী থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এখন চেয়ারম্যান পদে ৯৭ জন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৭৮৫ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে সদস্য পদে দুই হাজার ২৮৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আরও পড়ুন: খুলনা বিভাগের ১২৬ ইউপি নির্বাচন স্থগিত
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন অফিসার ফারাজী বেনজীর আহম্মেদ জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্ততি সম্পূর্ণ করা হয়েছে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে এসে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোটা দিতে পারবেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটের জন্য পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, স্টাইকিং ফোর্স, মোবাইল টিম, বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।