ঘটনার ৭২ ঘন্টা পরে ধর্ষণ মামলা নেয়া যাবেনা- বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের এমন বক্তব্য বিচারকদের জন্য বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক।
রবিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি ভুল নির্দেশনা দেয়া। সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল, সেজন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেটাও সম্পূর্ণ আইনানুগভাবে কিন্তু এগিয়ে যাবে। আইনে তার যা সুবিধা…তাকে শোকজ করা হবে। তিনি কেন বলেছেন তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। সেটা আইনিভাবে যে প্রক্রিয়া দেয়া আছে, সেটাই তার ব্যাপারেও প্রযোজ্য।’
আনিসুল হক বলেন, ‘কোন ফৌজদারি অপরাধের মামলা করার ব্যাপারে তামাদি বারিত হয় না (মানে ইট ইজ নট বার বাই লিমিটেশন)। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর ২১ বছর কোন মামলা হয়নি। ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর এই মামলার প্রথম এফআইআর হয়। মন্ত্রী আরও যুক্তি দেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে পরিস্কারভাবে বলা আছে, বাংলাদেশের কোন নাগরিক বা বাংলাদেশে সাময়িকভাবে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির বিরুদ্ধে বা পক্ষে একমাত্র আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। অথচ রেইনট্রি হোটেলে দুই নারীকে ধর্ষণ মামলার বিচারক বলেছেন, ঘটনার ৭২ ঘন্টার পরে মামলা নেয়া যাবে না। তাঁর এই বক্তব্যটি আইন এবং সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে দেয়া মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। ওই বিচারক আইন ও সংবিধান দুটোই ভায়োলেশন (লঙ্ঘন) করেছেন ‘
আরও পড়ুন: দেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী একজন আর্কিটেক্ট: আইনমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘এই ভায়োলেশনের তাৎপর্যটা কী? অনেক রায় আছে যেগুলো হয়ত বেআইনি হয়, আপিল বিভাগে গিয়ে স্যাটেসাইড হয়। এখানে তিনি যে কথাটা বলেছেন, সেটার একটা ইপ্লিকেশন আছে, একটা কোইনসিকিয়েন্স আছে। এ কারণেই আজকে বিচার বিভাগের যিনি গার্ডিয়ান, যিনি প্রধান তাঁকে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। ঠিক সে কারণেই আমি আইনমন্ত্রী হিসেবে গতকাল বলেছিলাম, প্রধান বিচারপতির কাছে এ বিষয়ে চিঠি দিবো।’
আনিসুল হক বলেন, ‘এখন কথা হচ্ছে এটা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন- বিজ্ঞ বিচারকরা প্রতিদিনই কিন্তু রায় দেন। রায় কেউ সন্তুষ্ট হয়, কেউ অসন্তুষ্ট হয়। যারা অসন্তুষ্ট হন, আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী , সংবিধান অনুযায়ী তারা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। সর্বোচ্চ আদালত হচ্ছে আপিল বিভাগ। সেই আপিল বিভাগের সাংবিধানিক কিছু বাড়তি ক্ষমতাও আছে। সেগুলো তারা প্রয়োগ করে। রায় দিলেই যে কোন বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়, তা নয়। তারা মেরিটের উপরে, আইনের উপরে, রায় দেয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন।’ ‘কিন্তু এখানে যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা হচ্ছে একজন বিজ্ঞ বিচারক তিনি ওপেন কোর্টে রায় দেয়ার সময় তার পর্যবেক্ষণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছেন, ৭২ ঘণ্টা পর কেউ যদি কোন ধর্ষণ মামলা করতে আসে, তাহলে সেই মামলাটা গ্রহণ না করতে। এটাই হচ্ছে আপত্তির জায়গা।’
বিচারক কামরুন্নাহারের দেয়া রায় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা লেখেন বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। কেড়ে নেয়া কথাটার মানে হচ্ছে জোর করে কেড়ে নেয়া। এটা কেড়ে নেয়া হচ্ছে না। এই রকম যদি ঘটনা ঘটে প্রধান বিচারপতির এই ক্ষমতা আছে, তাকে বিচারিক দায়িত্ব থেকে কিছুদিন সরিয়ে রাখা।’
বিচারকের পর্যবেক্ষণের কারণে কোন ভুল ম্যাসেজ যাবে কিনা- এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার বা নির্বাহী বিভাগ যদি বিচারকের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে তাদের বক্তব্য পরিস্কার না করতো, বিচার বিভাগ যদি পদক্ষেপ না নিত, তাহলে রং ম্যাসেজ হয়তো যেত কিন্তু এই পদক্ষেপ নেয়ার পর আমার মনে হয় না রং ম্যাসেজ যাওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে।’
আরও পড়ুন: সার্চ কমিটির মাধ্যমেই গঠিত হবে ইসি: আইনমন্ত্রী
৩৭ লাখ মামলার জট, ২০২২ সালে ৬ লাখ কমানোর পরিকল্পনা: আইনমন্ত্রী