বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ-ভারত ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনের সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বিদ্যমান সহযোগিতামূলক ঐকমত্যের সুযোগ নিয়ে দুই দেশই আমাদের অর্থনীতিকে আরও সংহত করে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ভ্যালু-চেইন আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।’
শীর্ষ সম্মেলনে উদ্বোধনের মাধ্যমে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেল সংযোগ পুনরায় চালু করা এ সমৃদ্ধির অন্যতম প্রধান উদাহরণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চলমান যোগাযোগের উদ্যোগগুলো এ ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।’
ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা আনন্দের সাথে বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতির মধ্যে ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরশীলতা স্বীকার করি।’
তিনি আরও বলেন, এক দিকে বাংলাদেশের উৎপাদন ও সেবা খাতে যেমন অনেক ভারতীয় নাগরিক নিযুক্ত রয়েছেন, অন্যদিকে ভারতে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক এবং চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী মানুষ যায় বাংলাদেশ থেকে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যুগান্তকারী সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে ৫০ বছর উদযাপন করেছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বছরেও পা রেখেছে বাংলাদেশ ও ভারত।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে। কয়েক মাস আগে, আমরা ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন করেছি।’
ভারতের সাথে সাতটি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা সই
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাপুজির (গান্ধী) প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশে একটি বিশেষ ডাক টিকিট অবমুক্ত করা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) আমরা বঙ্গবন্ধুর সম্মানে ভারতের ডাক বিভাগের একটি স্ট্যাম্পের উদ্বোধন করব।’
গুরুত্বপূর্ণ এ অনুষ্ঠানগুলো যৌথভাবে উদযাপনের জন্য আগ্রহী হওয়ায় ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে দুই দেশের অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র স্মরণে আমরা বিশ্বব্যাপী বাছাই করা কিছু শহরে আগামী বছরজুড়ে যৌথ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় আপনার উপস্থিতি আমাদের যৌথ উদযাপনের গৌরবময় স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখবে।’
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও ভারতের জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে সমঝোতা
নয়াদিল্লির গ্র্যান্ড হায়দ্রাবাদ হাউসে ২০১৯ সালের অক্টোবরে নরেন্দ্র মোদির সাথে তার সর্বশেষ বৈঠকের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, এরপর থেকে অনেক কিছু বদলেছে। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির আবির্ভাব দেখা দিয়েছে এবং অজ্ঞাত এ শত্রুকে মোকাবিলায় মানবজাতির সক্ষমতা পরীক্ষার মুখোমুখি।
করোনায় লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, জীবিকা ধ্বংস হয়েছে, অর্থনীতি হ্রাস পেয়েছে এবং সমাজ বিঘ্নিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সম্ভবত কোভিড-১৯ মহামারির সবচেয়ে বড় বহিঃপ্রকাশ হলো মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা।’
‘এ বছরের গোড়ার দিকে ঢাকায় আপনাকে স্বাগত জানানোর ইচ্ছাও অপূর্ণ থেকে গেছে। তবুও, আমাদের গত শীর্ষ সম্মেলনের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী, এ সংকটের মধ্যেও উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেভাবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এগিয়ে নিয়েছে তা প্রশংসাযোগ্য,’ বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘২০২০ সাল জুড়ে রেলপথ দিয়ে বাণিজ্য, উচ্চ-পর্যায়ের পরিদর্শন ও সভা, সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারতীয় পণ্যসামগ্রীর প্রথম পরীক্ষামূলক চালান প্রেরণ এবং কোভিড-১৯ নিয়ে সহযোগিতার মতো পারস্পারিক বিভিন্ন উদ্যোগ প্রত্যক্ষ করেছি।’
করোনায় ভারত বিশ্বের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত ও জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় মোদি সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্যাকেজগুলো ছাড়াও ‘আত্মনির্ভর ভারতের’ উদ্যোগে প্রবর্তিত অর্থনৈতিক প্যাকেজগুলো প্রশংসনীয়।’
বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু: নতুন হাইকমিশনার দোরাইস্বামী
‘আমরা বিশ্বাস করি, আপনার গৃহীত নীতিমালার মাধ্যমে ভারত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে,’ বলেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান।
বাংলাদেশেও করোনা মহামারির অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব মোকাবিলায় ১৪.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা এবং মার্চের শুরুর দিকে দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর আড়াই কোটির বেশি মানুষকে সহায়তা প্রদানের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বলয় সম্প্রসারিত করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
মরিশাসের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফলস্বরূপ, আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনে ব্যাপক বিঘ্ন সৃষ্টি এবং ভোক্তাদের চাহিদা হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি ঊর্ধ্বমুখী প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।’
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, ভারত সরকার এবং দেশটির জনগণ যারা বাংলাদেশের মুক্তির পক্ষে আন্তরিক সমর্থন জানিয়েছিলেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।