মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং এটি দেশে জঙ্গীবাদ উদ্বুদ্ধ করবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের একটি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) এ নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক ও একপেশে এবং বাংলাদেশকে নিজেদের দাসত্বের রাজ্যে সমর্পিত হতে বাধ্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা বলে দেশের জনগণ মনে করে।’
রবিবার সকালে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে সেতুমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশে খাদ্য সংকটের সময় ১৯৭৪ সালে কিউবার কাছে পাট বিক্রির অজুহাতে খাদ্যবাহী জাহাজ মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে নিয়েছিল আমেরিকা।’
তিনি বলেন, ‘ ৭১'র গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ এবং ৭৫'র বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের বিষয়ে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নচিহৃ ঝুলে আছে, তবুও বন্ধুত্বের প্রশ্নে স্পর্শকাতর এ বিষয়গুলোকে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি।’
আরও পড়ুন: দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ অব্যাহত রয়েছে: ওবায়দুল কাদের
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় এবং অভিন্ন ইস্যুসহ বহুপক্ষীয় ইস্যুতে দুই দেশ নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছে।’
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন লগ্নে যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি সিদ্ধান্তে আমরা বিস্মিত এবং ব্যথিত হয়েছি বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
র্যাব একটি এলিট ফোর্স হিসেবে কাজ করছে, সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদ দমনে এই বাহিনী অত্যন্ত পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে কাজ করছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের।
এ বাহিনীর কেউই আইনের উর্ধ্বে নয় উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় এ বাহিনীর কমপক্ষে সাতজন মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত হয়েছিল। কোন অভিযোগ থাকলে বাহিনী নিজে কিংবা মন্ত্রণালয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দুদক যে কোন তদন্ত কাজ চালিয়ে যেতে স্বাধীন ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু ঢালাওভাবে অভিযোগ এনে একটি বাহিনীর প্রধান এবং সাবেক কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে নিষেধাজ্ঞা প্রদান অযৌক্তিক। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের সিদ্ধান্তই এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
সেতু মন্ত্রী বলেন, ‘ যুক্তরাষ্ট্র আজ মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছে, আমরা তাদের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আগে পর্যবেক্ষণের অনুরোধ করছি। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, যা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। সেখানে দৃশ্যমান বর্ণবাদ বিরাজ করছে বলে অনেকেই মত প্রকাশ করেছিলেন।’
আরও পড়ুন: বিভাজন রেখা তৈরি করতে চায় বিএনপি ও তাদের দোসররা: ওবায়দুল কাদের
কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্য এবং নিপীড়ন প্রশ্নে খোদ জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল জানিয়ে ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন করেন, ‘মেক্সিকো-ইউএসএ সীমান্তে কতজন মারা গেছে? যেখানে বন্দুক হামলায় প্রতি বছর লাখো মানুষ মারা যায়, নির্বাচনে হেরে যেদেশের ক্যাপিটল হিল দখল করতে গিয়ে পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা বিশ্ববাসী লক্ষ্য করেছে। বিশ্ববাসী দেখেছে মার্কিন গণতন্ত্রের স্বরূপ ও তাদের মানবাধিকারের চেহেরা।’
অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার সূচকগুলো যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতার কথা এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বারবার উল্লেখ করেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খোদ এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিকে আমেরিকা সফরে বাধা দেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর কোন কোন খুনী এখনও আমেরিকায় লুকিয়ে আছে, যুদ্ধাপরাধীরাও সেদেশে পালিয়ে আছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সিনেটর অব লেবার রবার্ট রেইচ এক টুইট বার্তায় বিশ্বকে জানিয়েছিলেন শুধু ২০২০ সালে সেদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটেছে ৯৮৪টি।’
২০১৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটেছে ছয় হাজার ৬০০ জন। প্রতিবছর সেখানে প্রায় এক হাজার মানুষ বিনা বিচারে মারা যায়, যা বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘যাদের দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন বিভিন্ন সিটিতে রাস্তায় নামে, তাদের অন্যদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কোন ধরনের বক্তব্য গ্রহনযোগ্য নয়।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত এ সিদ্ধান্তের গভীরে বাংলাদেশ বিরোধী কিছু ব্যক্তি ও অপশক্তির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্ট বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র অতীতেও কাজে আসেনি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘শূন্যতা থেকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র থাকা সত্বেও।’
আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক শক্তির ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান ওবায়দুল কাদেরের
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে অব্যাহত অগ্রযাত্রা তা অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না, তারা এ জনপদ নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে চায়।’
প্যালেস্টাইনে ইসরাইল যখন নির্বিচারে অবলা নারী, নিরপরাধ শিশুসহ শতশত ঘরবাড়ি ধ্বংস করে মিসাইল বোমা নিক্ষেপ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ইসরাইলের পক্ষে থাকে, টু শব্দটাও উচ্চারণ করে না।
তিনি আরও বলেন, ‘ যারা মধ্যপ্রাচ্য, ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনে মানুষের মৃত্যু এবং উদ্বাস্তু হওয়ার পিছনে দায়ী তারা আজকে বিশ্বকে মানবাধিকারের ছবক দিচ্ছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি পারস্পরিক আস্থা এবং বিশ্বাস উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ আশা করে দুই দেশের জনগণের মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে মার্কিন প্রশাসন সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধিকতর তথ্য নির্ভর এবং যত্নবান থাকবে।’
যে কোন ইস্যু এলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে সুরাহার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তা না করে একপেশে কোন সিদ্ধান্ত বন্ধুপ্রতিম কোন দেশের প্রতি আস্থার বহিঃপ্রকাশ নয়।
ইতোমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশ তার ক্ষোভ ও অসন্তোষের কথা জানিয়েছে।’