প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীর কল্যাণের স্বার্থে চলমান যুদ্ধ ও অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধে এগিয়ে আসতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মঙ্গলবার(১৭ অক্টোবর) ফিলিস্তিনের একটি হাসপাতালে বোমা হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
বুধবার(১৮ অক্টোবর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল দিবস-২০২৩ এর উদ্বোধনী ও শেখ রাসেল পদক-২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিন: প্রধানমন্ত্রী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মাত্র ১০ বছর বয়সে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডির অন্যতম শহীদ ছিলেন রাসেল।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে শিশু ও নারীরা। ইসরায়েল এখন ফিলিস্তিনের ওপর হামলা শুরু করেছে। মঙ্গলবার একটি হাসপাতালে বোমা হামলায় অনেক শিশু নিহত হয়েছে। সেখানে শিশুদের রক্তাক্ত ছবি দেখা গেছে। ইসরায়েলেও শিশুদের হত্যা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা যুদ্ধে বাবা-মা ও সন্তানদের হারানো মানুষের বেদনা ও কষ্ট বুঝতে পারেন। কারণ ১৯৭৫ সালের রক্তপাতের পর বিদেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করতে হয়েছে দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাই আমরা যুদ্ধ চাই না। আমি আহ্বান জানাচ্ছি যুদ্ধ বন্ধের।’
তিনি আরও বলেন, অস্ত্র উৎপাদন ও প্রতিযোগিতার জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয় তা খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা এবং বিশ্বের শিশুদের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ব্যবহার করতে হবে। ‘এটা আমাদের দাবি। আমিও এই দাবি করছি।’
বাংলাদেশ সবসময় শান্তির জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা শান্তি চাই। কারণ, শান্তি উন্নয়ন নিয়ে আসে এবং যুদ্ধ ধ্বংস ডেকে আনে। আমরা ধ্বংস চাই না, বরং উন্নয়ন ও শান্তি চাই।’
শিশুদের কল্যাণ ও সাফল্যে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শিশুদের উন্নয়নে তারা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সুতরাং শিশু মৃত্যুহার ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসের পাশাপাশি তাদের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শিশুরা যাতে শৈশব থেকেই শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চায় সম্পৃক্ত হয়ে সঠিকভাবে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, 'আমি বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলেছি। আমরা দেশের শান্তি ও অগ্রগতি চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাবা-মা ও প্রিয়জনদের অনুগত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'শিক্ষাই একজন মানুষের প্রধান শক্তি।’
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ও তার ছোট বোন রেহানা তাদের সন্তানদের বলেছিলেন যে তারা তাদের জন্য অর্থ ও সম্পদের মতো কিছুই রেখে যেতে পারবেন না এবং তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেছিলেন। তারা (তাদের সন্তানরা) প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা গ্রহণ করেছে এবং বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, এখন তাদের সন্তানরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, অটিস্টিক শিশুদের উন্নয়ন ও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির মতো দেশের উন্নয়নে পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘ওরা সামনে আসে না। তারা নেপথ্যে থেকে দেশ ও দেশের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। তারা দেশের কল্যাণে আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: জন্মদিনে শেখ রাসেলকে স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক থেকে দূরে থেকে নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে দেশকে এগিয়ে নিতে শিশুদের উচ্চ আকাঙ্ক্ষী হতে আহ্বান জানান।
২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তার সরকারের ভিশনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের শিশু-কিশোররা স্মার্ট বাংলাদেশের সৈনিক হবে এবং সে সময় দেশকে নেতৃত্ব দেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি স্কুলে একটি করে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শামসুল আরেফিন, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, মহাসচিব কে এম শহীদুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন, শিশু বক্তা আমিরা নায়ের চৌধুরী বক্তব্য দেন।
পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন রনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা ভারতীয় কর্নেল (অব.) অশোক কুমার তারার একটি ভিডিও বার্তা, শেখ রাসেলের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি এবং শেখ রাসেল দিবস-২০২৩ উপলক্ষে একটি ‘থিম সং’ পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট কার্ড বিনিময়ের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং আইসিটি বিভাগের আরও কয়েকটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন।
রাসেলের শৈশব নিয়ে লেখা 'শ্রাবণের আবরণ শেখ রাসেল' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
'শেখ রাসেল দীপ্তিময়, নির্ভীক নির্মল দুর্জয়' প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হচ্ছে শেখ রাসেল দিবস-২০২৩।
রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ রাসেল পদক-২০২৩ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ পদক-২০২৩ প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন চিত্রাঙ্কন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সমাপনী পুরস্কার বিতরণ করেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে) এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকা, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ পদক-২০২৩ গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ বন্ধ করুন, নারী ও শিশুদের বাঁচান: বিশ্ব নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান