তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে মিয়ানমার সরকার এ সংকট সমাধানে অনিচ্ছুক। কাজেই এ পরিস্থিতি বিষয়ে কিছু করার দায়িত্ব আমাদের- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের- হাতে পড়েছে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ১১ নম্বর সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও ওআইসি সচিবালয়ের আয়োজনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের পার্শ্ব-অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহাথির বলেন, কাজের শুরু হিসেবে জাতিসংঘকে তাদের ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের মনে রাখতে হবে যে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভবিষ্যতে মানবসৃষ্ট দুর্দশা রোধ করার আশায়। জাতিসংঘের নীরবতা কানে তালা লাগার মতো বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সংকট সমাধান ও অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপের বাইরে অন্যদেরও তাদের দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে।
‘মালয়েশিয়া দৃঢ়তার সাথে বলা অব্যাহত রাখবে যে প্রত্যাবাসন হতে হবে নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও সম্মানের সাথে। এটা শুধুমাত্র হতে পারে রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব দেয়ার মাধ্যমে,’ যোগ করেন তিনি।
মিয়ানমারের পরিস্থিত ভালো কিছু নয় এবং অনেক রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিতে (আইডিপি) পরিণত হয়েছেন এবং রাখাইনে বিভিন্ন শিবিরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
‘যখন বিশ্ব আইডিপি শিবিরগুলোর সাথে অতীতের কুখ্যাত বন্দী শিবিরগুলোর তুলনা করে তখন মিয়ানমার সরকার দ্রুতই তা অস্বীকার করে। কিন্তু তারা জাতিসংঘের কিছু কর্মকর্তা ও মানবিক সাহায্য কর্মীদের প্রবেশাধিকার দেয়নি। যদি মিয়ানমারের লুকানোর কিছু না থাকে তাহলে রাখাইনের পরিস্থিতি কেন অন্যদের দেখতে দেয়া হচ্ছে না? যারা শিবিরে বাস করছেন তাদের পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও সাহায্য করতে এসব কর্মকর্তা ও সাহায্য কর্মীদের যেতে দিন। মিয়ানমারকে দেখাতে হবে যে তারা সংকট দূর করতে আন্তরিক,’ বলেন মাহাথির।
কিছু উদ্বাস্তুকে প্রত্যাবাসনের দুটি উদ্যোগের উভয়টি ব্যর্থ হওয়ার প্রসঙ্গে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর কারণগুলো সুস্পষ্ট। কেউ তো ফিরবে না যদি না তারা অনুভব করে যে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আছে।’
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিপূণভাবে রোহিঙ্গাদের বিষয়টিকে ভয়, ঘৃণা ও সহিংসতায় ঠেলে দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একইভাবে নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়টি নিছক বিবেচনা করাও অগ্রহণযোগ্য বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এটা পরিষ্কার যে জবাবদিহি নিশ্চিতে মিয়ানমারের পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। এমন পদক্ষেপ কেমন করে কাজ করবে যদি নৃশংসতার জন্য দায়ী অপরাধীরা সিস্টেমের অংশ হয়ে থাকে?’
রোহিঙ্গাদের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে ওআইসির ইতিবাচক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন মাহাথির। ‘এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে, আমরা আশা করি অন্যান্য দেশ ওআইসিকে সাহায্য করবে, যাতে জঘন্য অপকর্ম করা অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে না পারে।’
রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়ার মানবিক সহায়তা তুলে ধরে মাহাথির বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের আমাদের সঙ্গতি ও ক্ষমতা অনুযায়ী সাহায্য অব্যাহত রাখব।’
‘তারপরও আমরা আশা করি রোহিঙ্গাদের ওপর পতিত দুর্দশার ইতি ঘটাতে আমাদের সংকল্পে অন্যরা আমাদের ও বাংলাদেশের সাথে যোগ দেবে। আমাদের এ সংকটের ইতি টানা দরকার এবং এটি আমাদের এখনই করতে হবে,’ বলেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের প্রতি হওয়া নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘চলুন, কালোকে কালো বলা শুরু করি। রাখাইন রাজ্যে যা হয়েছে তা গণহত্যা।’
‘যা হয়েছে তা ছিল গণহত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য কুৎসিত মানবাধিকার লঙ্ঘন। যার ফল রোহিঙ্গাদের গণহারে দেশ ছেড়ে পালানো- বেশিরভাগই গিয়েছেন কক্সবাজারে। এ ক্ষেত্রে ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ যা করেছে তার জন্য দেশটির প্রশংসা করি আমরা,’ যোগ করেন মাহাথির।