ভাসানচরে সফলভাবে রোহিঙ্গাদের প্রথম ব্যাচ স্থানান্তরের পর তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘বিশ্ব নেতৃত্ব ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো মিয়ানমারের নিপীড়িত জনগণের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলেও তারা বারবার বিবৃতি দিচ্ছে। তারা শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যাচ্ছে। তাদের (রোহিঙ্গা) স্থানান্তর বা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে কেউই এগিয়ে আসেনি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুতুপালংয়ের উপচেপড়া জনাকীর্ণ পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধস এবং অন্যান্য অপ্রীতিকর ঘটনার ফলে মৃত্যু ও দুর্ঘটনা এড়াতে এবং আরও উন্নত জীবনমানের ব্যবস্থা করতে পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হচ্ছে। তাছাড়া সেখানে (কুতুপালং) মাদক ব্যবসার প্রসার এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও ঘটছে।
ড. মোমেন বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গা শিবির বা ভাসানচরের সুবিধা নিয়ে উচ্চস্বরে কথা বলছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও মর্যাদার সাথে নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারের কাছে যাওয়ার সাহস বা আন্তরিকতা কারও নেই।
গত তিন বছরে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘন সত্ত্বেও দেশটিতে ইউরোপিয়ান, আসিয়ান, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বহুগুণ বেড়েছে, বলেন ড. মোমেন।
তিনি বলেন যে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কোনোটিই মিয়ানমারে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করছে না, ঠিক যেমনটি করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদীদের ক্ষেত্রে।
‘বাস্তবতা হলো, রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমার তৈরি করেছে এবং তারাই কেবল এর সমাধান করতে পারে,’ তিনি বলেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা স্থানান্তরকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা না করতে ঢাকার আহ্বান
ড. মোমেন বলেন, যত দ্রুত সম্ভব বিশ্বের সমস্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে এই সঙ্কট সমাধানের জন্য অর্থবহ উপায়ে মিয়ানমারের কাছে যাওয়ার জন্য নিজেদেরকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করতে হবে।
কক্সবাজার ক্যাম্পগুলোতে নানান ঝুঁকি এড়াতে বাংলাদেশ সরকার পর্যায়ক্রমে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার প্রথম পর্যায়ে এক হাজার ৬০০ এরও বেশি আগ্রহী রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
কক্সবাজারের এই হতাশাগ্রস্ত লোকদের দীর্ঘাদিন থাকার কারণে তাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য সরকার জরুরিভাবে ভাসানচরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা নেয়।
সূত্র অনুযায়ী, দ্বীপটির উন্নয়নে সরকার ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ১৩ হাজার একর ভাসানচর দ্বীপে বছরব্যাপী মিঠা পানি, চমৎকার হ্রদ ও যথাযথ অবকাঠামো ও আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।।
এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, কৃষি জমি, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, দুটি হাসপাতাল, চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, গুদাম, টেলিযোগাযোগ পরিষেবা, থানা, বিনোদন ও শিক্ষা কেন্দ্র, খেলার মাঠ ইত্যাদি রয়েছে।
এটি কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোর অস্থায়ী কাঠামোগুলোর মতো নয়, ভাসানচরের আবাসনটি কংক্রিট দিয়ে নির্মাণ করা যা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও অক্ষত থাকবে।
শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে সরকারের প্রকৃত প্রচেষ্টাকে দুর্বল বা ভুলভাবে ব্যাখ্যা না করতে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
কক্সবাজারের জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ এবং ভূমিধসসহ যেকোনো ঝুঁকি এড়াতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করেছে সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং তাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। বাংলাদেশ সরকার অস্থায়ীভাবে আশ্রয়প্রাপ্ত মিয়ানমার নাগরিকদের আশ্রয় ও নিরাপত্তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।’
রোহিঙ্গাদের অধিকার, দ্রুত, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্যও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের সাথে প্রত্যাবাসন শুরু করার কাজে জড়িত, যা এই সঙ্কটের একমাত্র স্থায়ী সমাধান।