তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান, বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে দেয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে অসম্পূর্ণ ও ভুলভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংবিধানে সন্নিবেশিত ৭ই মার্চের এই ভাষণের ১৩৬টি স্থানে ভুল পেয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত একটি উচ্চক্ষমতা সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে।
রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস জানিয়েছেন, প্রতিবেদন দাখিল হয়েছে; তবে শুনানির দিন ধার্য হয়নি। আশা করছি আগামী সপ্তাহে এই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হবে।
আরও পড়ুন: এবি ব্যাংকের অর্থ আত্মসাত: আসামিদের গ্রেপ্তারে পদক্ষেপ জানতে চান হাইকোর্ট
২০২০ সালের ১০ মার্চ সংবিধানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ভুলভাবে সন্নিবেশিত হয়েছে কি না তা যাচাই করতে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ৭ মার্চের ভাষণের সময় উপস্থিত থাকা ব্যক্তিসহ বিশিষ্টজনদের এ কমিটিতে রাখতে বলা হয়েছিল।
এছাড়া সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে থাকা ভাষণের সঙ্গে এ সংক্রান্ত সব অডিও-ভিডিও পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদনও আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। একই সঙ্গে সংবিধানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সঠিক ভাষণ কেন অন্তর্ভুক্ত করা হবে না তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এআদেশ দেন।
পরে ঐ আদেশ অনুযায়ী বাংলা একাডেমির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানকে (মরহুম) প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাংবাদিক জাফর ওয়াজে কে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়।
এছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক ড. মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুন, বাংলাদেশ বেতারের সাবেক উপ-মহাপরিচালক আশফাকুর রহমান, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক হোসনে আরা তালুকদার, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স. ম গোলাম কিবরিয়া ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস. এম হারুন-অর-রশীদ।
আরও পড়ুন: পরিবেশ দূষণকারীদের নাম ৭ দিনের মধ্যে প্রকাশের নির্দেশ
এই কমিটিই এ ৭ই মার্চের ভাষণের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল ভাষণের তৃতীয় লাইনে খুলনা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পঞ্চম লাইনে ‘তারা অধিকার চায়’ অন্তর্ভুক্তি হয়নি। সংবিধানে ৫ম ও ৬ষ্ঠ লাইনে ‘নির্বাচনের পর বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন’-এটা রয়েছে। কিন্তু মূল ভাষণে রয়েছে, আপনারা নির্বাচনে গিয়ে নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমরা ভোট পাই। আমরা দেশের একটা শাসনতন্ত্র তৈয়ার করবো।’ ভাষণের ১৭ নম্বর লাইনে, ‘আপনারা জানেন, দোষ কী আমাদের? আজকে তিনি’ অন্তর্ভূক্ত হয়নি।
সংবিধানের এই ভাষণের ৮৭-৮৮ লাইনের পর, ‘ভাইয়েরা আমার, যেভাবে আপনাদের, আপনারা ঠাণ্ডা হবেন না, ঠাণ্ডা হয়ে গেলে জালেমরা (ফামলিং) অন্য কোথাও আক্রমণ করবে, আপনারা হুঁশিয়ার থাকবেন এবং প্রস্তুত থাকবেন। প্রসেশন চলবে; কিন্তু মনে রাখবেন ডিসিপ্লিন সোলজার ছাড়া, ডিসিপ্লিন ছাড়া কোনো জাতি জিততে পারে না। আপনারা আমার ওপর বিশ্বাস নিশ্চয় রাখেন, জীবনে আমার রক্তের বিনিময়েও আপনাদের সঙ্গে বেইমানি করি নাই। প্রধানমন্ত্রিত্ব দিয়ে আমাকে নিতে পারে নাই। ফাঁসিকাষ্ঠে আসামি দিয়েও আমাকে নিতে পারে নাই। যে রক্ত দিয়ে আপনারা আমায় একদিন জেল থেকে বাইর কোরে নিয়ে এসেছিলেন, এই রেসকোর্স ময়দানে আমি বলেছিলাম আমার রক্ত দিয়ে আমি রক্তের (ফামলিং) ঋণ শোধ করবো। মনে আছে? আমি রক্ত দেবার জন্য প্রস্তুত। আমাদের মিটিং এখানেই শেষ। আসসালামু আলাইকুম।’ এই লাইনগুলো অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। এভাবে সংবিধানে অন্থর্ভুক্ত ভাষণে মূল ভাষণের ১৩৬টি জায়গায় বিকৃত করে ছাপানো হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালের ৬ মার্চ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাজবাড়ীর রায়নগর গ্রামের কাশেদ আলীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস এ রিট দাখিল করেন।
রিটে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর ভাষণের হুবহু সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেকগুলো ভুলভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইন সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিব, তথ্য সচিব এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের পরিচালককে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ড. ইউনূসের মামলার কার্যক্রম দুই মাস স্থগিত থাকবে: আপিল বিভাগ