তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দেশের সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। কোনো বিশেষ পেশার মানুষের জন্য নয় এবং বিশ্বের প্রায় সবদেশেই এ ধরনের আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে বেসরকারি সংস্থা ডিপ্লোম্যাটস আয়োজিত ‘ফ্যাক্ট এন্ড ইমপ্যাক্ট অব ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ সেমিনারে নিজ দপ্তর থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বিষয়টা যখন আজকের বাস্তবতা, তখন পৃথিবীর প্রায় সবদেশ এ ধরনের আইন তৈরি করেছে কিংবা করছে। আমাদের দেশে যখন ডিজিটাল বিষয় ছিল না তখন এ আইনের প্রয়োজন ছিলো না। আজকে যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা অনলাইনে একজন গৃহিনীর চরিত্র হনন করা বা মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয় তাহলে তিনি কোন আইনের বলে প্রতিকার পাবেন! একজন কৃষক, ছাত্র, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী কিংবা একজন রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে যদি সেটি ঘটে, তাহলে প্রতিকার পাওয়ার জন্য আইনের প্রয়োজন রয়েছে এবং সেই প্রয়োজনীয়তার নিরিখেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিএনপিপন্থী চিকিৎসকেরাও খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করছেন: তথ্যমন্ত্রী
ভারতে দি ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্ট ২০০০, পাকিস্তানে দ্য প্রিভেনশন অব ক্রাইম অ্যাক্ট ২০১৬ এবং সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়াতেও এ ধরনের আইন করা আছে, একটি ফ্রেমওয়ার্ক আইনের অধীনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশগুলো এ ধরনের আইন প্রণয়ন করেছে, অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় সবদেশেই এ আইন করা হচ্ছে, জানান ড. হাছান।
বিশ্ব প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি জানান, কেউ যদি ফেক-আইডি দিয়ে কিংবা বিদেশ থেকে কোনো অপপ্রচার, গুজব রটনা বা চরিত্র হননে লিপ্ত হয়, তখন তাকে ধরা কঠিন। তখন আমরা সার্ভিস প্রোভাইডারকে ধরি এবং জরিমানা করি। ফেসবুকের মাধ্যমে কেউ যদি গুজব রটায় কিংবা রাষ্ট্র-সমাজবিরোধী অস্থিরতা তৈরি করতে চায়, তাহলে সেক্ষেত্রে ফেসবুক হোক, ইউটিউব হোক কিংবা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোক, সেই ব্যক্তি ও প্লাটফর্ম দুইয়ের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহনের আইন পৃথিবীর সবদেশেই আছে এবং হচ্ছে।
দেশে ডিজিটাল পদ্ধতির বিস্তার সম্পর্কে ড. হাছান বলেন, ‘২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে সরকার গঠন করার আগে আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করতো মাত্র ৫০ লাখ মানুষ। আজকে ১১ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রায় আট কোটি মানুষ। আমরা সরকার গঠন করার আগে আমাদের দেশে হাতেগোনা কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা ছিল। আজকে অনলাইন পত্রিকা কত বা ক’হাজার সেটি একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়। এর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মানুষ অনলাইনে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রতিকূলতা ও বিগ্রহের শিকার হচ্ছে, অনলাইনে নানা ধরনের অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ডিস লাইন ডিজিটালাইজড করার সময় বাড়ানো হবে: তথ্যমন্ত্রী
অনলাইন অপরাধের উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পেছনে ফিরে গত কয়েক বছরের ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে, রামুর ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর কারণে হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে যে ঘটনা ঘটেছে সেটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের কারণে। এর আগে যে ছেলেধরা গুজব এবং পদ্মাসেতু করতে হলে সেখানে নরবলি দিতে হবে এমন গুজব রটিয়ে দেয়া হলো এবং সেকারণে অনেক নিরীহ মানুষ নানাভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হলো, সেটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে।’
এসব কারণেই এ আইন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেশের মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব থেকেই এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে অবশ্যই এ আইনের যাতে অপপ্রয়োগ না হয়, কারো মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় কিংবা মুক্তমত-মুক্তবুদ্ধিচর্চার ক্ষেত্রে ব্যত্যয় সৃষ্টি না করে সেজন্য সরকার সচেতন আছে এবং সময়ে সময়ে সেজন্য পদক্ষেপও গ্রহণ করা হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে এটর্নি জেনারেল আবু মো. আমিন উদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বিশেষ অতিথি হিসেবে সেমিনারে বক্তব্য দেন। ব্যারিস্টার এস এম শফিউল্লাহ রহমান, ব্যারিস্টার আলী আসিফ খান রাজীব এবং অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কাজল মূল আলোচনায় অংশ নেন।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর দাবি স্বাস্থ্যগত নয়, রাজনৈতিক: তথ্যমন্ত্রী