সমৃদ্ধ শেয়ারবাজার গড়তে মার্চেন্ট ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের অন্যতম স্টেকহোল্ডার হলো মার্চেন্ট ব্যাংক৷ শেয়ারবাজারের টেকসই উন্নয়নে ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানো, সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মধ্যে সমন্বয় এবং বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বাড়ানো মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর অন্যতম প্রধান কাজ৷
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজার পরিস্থিতি অনুকূলে নয়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে বোঝা যায়, বাজারে অর্থের জোগান কম ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার নির্দেশ দিয়েছেন যা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যা এরইমধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ ও সাহস জোগাচ্ছে৷ মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ভূমিকা পালনের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর সুদূর প্রসারী দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব৷’
আরও পড়ুন: ডিএসইর নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের যোগদান
মঙ্গলবার (১৪ মে) বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মাজেদা খাতুনের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের কমিটির সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এসব কথা বলেন৷
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান, প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খায়রুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা৷
ডিএসই চেয়ারম্যান আরও বলেন, উন্নত দেশের পুঁজিবাজার সে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অন্যান্য দেশে দেখা যায় সে দেশের মানি মার্কেট যতটা সাপোর্ট দেয় পুঁজিবাজারও ততটুকুও সাপোর্ট দেয়। আমরা সব সময় বলে আসছি যে পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ না করলে পুঁজিবাজার সাসটেইনেবল হবে না। এখানে দুই তিন বছরের জন্য আসলেই বাজার ভালো হবে না। আপনারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখানে এসে পরের দিনই লাভ তুলতে চান। আর এ কারণেই বড় পতন হয়। সে যায়গাতে আপনাদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমরা চাই আপনারা এ যায়গায় কাজ করবেন।
ড. হাসান বাবু আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্ত করার কথা বলেছে। প্রধানমন্ত্রীর কিন্তু সব যায়গাতে নজর রয়েছে। কোম্পানির আইপিও তালিকাভুক্ত করার আইনে কিছু সমস্যা আছে যেগুলো সংস্কার করতে হবে। তবে সংস্কার করতে গিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয় আপনার এমন কিছু করবেন না। আমি সব সময় বলে আসছি, সামনেও বলব যে তালিকাভুক্ত ও তালিকা বহির্ভূত কোম্পানির মধ্যে করের উল্লেখযোগ্য ব্যবধান না করা গেলে ভালো কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত করা যাবে না। আর শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয় বাংলাদেশে যেসব গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে সেগুলোও তালিকাভুক্তিতে কাজ করতে হবে।
মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি তথা ভালো কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান কাজ হচ্ছে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা। যা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট ইস্যু নিয়ে কথা বলতে হবে। নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তিনি সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। বাজার উন্নয়নে যদি ডিএসই, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ডিবিএ একসাথে কাজ করে তাহলে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এছাড়া অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাজার উন্নয়নে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে দ্বৈত কর, গুণগত মানসম্পন্ন আইপিও আনা, আইপিও প্রাইসিং সিস্টেম, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, মার্জার একুইজেশন, পলিসিগত প্রতিবন্ধকতা, ঘন ঘন আইন-কানুন পরিবর্তন না করা, কাট-অফ মূল্যের অধিক মূল্যে বিডকারীদের প্রোরাটার ভিত্তিতে সিকিউরিটিজ প্রদান, আইপিওর কোটা ও লক-ইন পিরিডের কিছু সংশোধনী আনা, সিকিউরিটিজ ভ্যালুয়েশনের ক্ষেত্রে মার্কেট অ্যাপ্রোচ ও ইনকাম অ্যাপ্রোচ মেথড অনুসরণ করা, বিডিংয়ের সম্মতি পাওয়ার পরই রোড-শোর আয়োজন করা, মার্জিন ঋণের আইনে কিছু পরিবর্তন আনা, গবেষণায় জোর দেয়া ইত্যাদি বিষয় অন্যতম।
আরও পড়ুন: ক্রান্তিকাল পেরিয়ে সম্ভাবনার পথে শেয়ারবাজার: ডিএসইর চেয়ারম্যান
শেয়ারবাজারে নিরবচ্ছিন্ন লেনদেনের জন্য নতুন ডাটা সেন্টার চালু ডিএসইর