তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ অভিযুক্ত ডেপুটি গভর্নর ও অন্যান্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
২৭ অক্টোবরের মধ্যে এ বিষয়ে দুদককে জানাতে বলেছেন আদালত।
সম্প্রতি দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিকভাবে এ আদেশ দেন।
দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন।
ডিএজি আমিন উদ্দিন বলেন, আজ শুনানি শুরুর আগে বেঞ্চ আইনজীবীদের প্রতিবেদনটি পড়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) আর্থিক কেলেঙ্কারিতে পাঁচ ডেপুটি গভর্নরসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৪৯ জন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন।
আরও পড়ুন: মানারাতের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন বিভাগের এসব কর্মকর্তার সহায়তায় প্রশান্ত কুমার হালদার ও মেজর (অব.) মান্নান বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এ সংক্রান্ত দুটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিআইএফসি ও আইএলএফএসএল থেকে অবৈধভাবে জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে মোট তিন হাজার ৭৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর মধ্যে আইএলএফএসএল শুধু ভারতে কারাবন্দি প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) এবং তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেই নেয়া হয়েছে তিন হাজার ১৩০ কোটি টাকা। আর বিআইএফসি থেকে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান ও তার প্রতিষ্ঠান নিয়ে গেছে ৬০০ কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে এই লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও নিশ্চুপ ছিলেন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
তদন্ত প্রতিবেদনে এই লুটপাটের জন্য প্রধানত নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগকে দায়ী করা হয়েছে। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী তিনজন ডেপুটি গভর্নর, ৬ জন নির্বাহী পরিচালক, ১১ জন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এবং ১৫ জন উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এবং বিভিন্ন পর্যায়ের আরও ১২৪ কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে।
এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের দুজন ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকসহ মোট ৫১ জনকে দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের দুজন ডেপুটি গভর্নর, আটজন নির্বাহী পরিচালক, পাঁচজন জিএমসহ মোট ২৯ কর্মকর্তার নাম এসেছে।