সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণ করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল।
এসময় বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘আমি মেজর সিনহা হত্যা মামলাটি বিভিন্ন ইস্যু খুঁটিনাটি খোঁজার চেষ্টা করেছি। এতে এপিবিএনের তিন সদস্য দায়িত্বে ছিলেন। এ তিনজনই প্রথমে সিনহার গাড়িটি আটকানোর পর ছেড়ে দিলেও পুলিশ কি কারণে পুনরায় আটকালেন এবং ১০ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে গুলি করা হয়। এতে প্রমাণিত হয় সিনহা হত্যা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
আরও পড়ুন: সিনহা হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু
বিচরকের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে সিনহার সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যের বিবরণীতে চার রাউন্ড গুলি করে লিয়াকত আলী। এছাড়াও লিয়াকতের জবানবন্দিতে ওসি প্রদীপ সিনহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। সিনহার হাতে পিস্তল আছে ভেবে লিয়াকত গুলি করার কথা স্বীকার করেছেন। শেষ পর্যন্ত ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সিনহার বামপাশে লাথি মারেন এবং সিনহা নিস্তেজ হয়ে যান।
একইভাবে এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতের জবানবন্দিতেও লিয়াকত আগে থেকে সিলভার কালারের গাড়ি থামাতে বলেন এবং তাকে সঙ্গে চেকপোস্টে আসেন। পরে দুই হাত উঁচু করে সিনহা সামনের দিকে ঝুঁকে ছিলেন। সে সময় লিয়াকত চার রাউন্ড গুলি করে। প্রদীপ ঘটনাস্থলে এসে বলেন, অনেক কষ্টের পর তোকে পেয়েছি। এরপর বুকের বাম পাশে লাথি মারেন এবং সিনহা নিস্তেজ হয়ে যান। ওসি প্রদীপের ভয়ে জব্দ তালিকা তৈরি করি। মূলত ওসি প্রদীপ যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন আমি সেভাবে করেছি। এতে করে হত্যার ঘটনাস্থলে লিয়াকত, নন্দ দুলাল সক্রিয় ভূমিকা রাখার প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও মাইকে ঘোষণা দিয়ে সিনহাকে ডাকাত সন্দেহে গণপিঠুনি দিয়ে হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আয়াজ ও নিজাম উদ্দিনকে পাঁচ লাখ টাকার দেয়ার কথা থাকলেও ওসি প্রদীপ তা দেয়নি।
এর আগে, দুপুর ২টার দিকে ৯ পুলিশ, তিন এপিবিএন সদস্য ও তিন স্থানীয় বাসিন্দাসহ ১৫ অভিযুক্তকে আদালতে আনা হয়।
আরও পড়ুন: সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘিরে কক্সবাজারে নিরাপত্তা জোরদার
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ও বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।