বাগেরহাটের মংলায় নিজস্ব পরিচালনার ভিত্তিতে ৫৫ মেগাওয়াট একটি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ-চায়না কনসোর্র্টিয়াম –এর সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড একটি চুক্তি করবে। রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর এই চুক্তি সাক্ষর হবে।
প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান বিপিডিবি স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ২০ বছর বিদ্যুৎ কিনবে।
এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটি চায়না-বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামকে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, কনসোর্টিয়াম অব ইনভিশন এনার্জি, জিয়াংসু কোম্পানি লিমিটেড, চায়না, এসকিউ ট্রেডিং অ্যান্ড ইন্ঞ্জিনিয়ারিং, বাংলাদেশ ইনভিশন রিনিউয়েবল এনার্জি লিমিটেড, হংকং একটি বিশেষ যান প্রকল্পের (এসপিভি) আওতায় মোংলা গ্রিন পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ করবে।
প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬ দশমিক ৫৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিপিডিবি ওই পাওয়ার প্লান্ট থেকে ঘন্টায় প্রতি কিলোওয়াট ১৩ টাকা হারে কিনবে।
বিপিডিবি’র একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার চুক্তির আওতায় বেসরকারি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পুরো সময়ে দুই হাজার ৩৫ দশমিক ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করবে।
পড়ুন: রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র: সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদির যৌথভাবে ১ম ইউনিট সম্পন্নের ঘোষণা
বিপিডিবি কর্মকর্তা বলেন, চীনা-বাংলাদেশি কনসোর্র্টিয়াম টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন করদাতা ছিলেন।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) বলছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ২০২০ সালে এক হাজার ১৫২ মেগাওয়াট ক্ষমতার
বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্য বাস্তবায়ন শুরু করে মোট ২ দশমিক ৯ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে।
এর আগে ২০১৫ সালের মার্চে বিপিডিবি কক্সবাজারের মহেশখালী নদীর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন খুরুসকুল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) প্রকল্প চুক্তি করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের টেইলর ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ ও পিএইচ-কনসাল্টিং গ্রুপ অব ডেনমার্ক এবং মাল্টিপল গ্রিন এনার্জি অব
বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে নেয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তিটি হয়।
কিন্তু গত পাঁচ বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় এই স্পন্সর।
বিপিডিবি’র মংলা প্রকল্পটিও ওই তিনটি প্রকল্পের মতোই একটি প্রকল্প।
কিন্তু এই পদক্ষেপটি দরদাতাদের বড় পরিসরে অংশগ্রহণ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
পড়ুন: বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আগামী মাসে আরও উন্নতি হবে: নসরুল হামিদ
বিপিডিবি কর্মকতা বলেন, একমাত্র দরদাতা চাইনিজ ফার্ম ইনভিশন এনার্জি দরপত্রে অংশ নিয়ে দুটি স্থানের মধ্যে একটি স্থান মোংলাকে নির্ধারণ করে।
বিপিডিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. জহির আহমেদ বলেন, যে দরপত্রটি আহ্বান করা হয়েছিল তা জমাদানের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিপিডিবি দরপত্রটি ছেড়ে ছিল। এর আগে বিপিডিবি একটি ১০০ মেগাওয়াট অফশোর বায়ু বিদ্যুত প্রকল্পের জন্য দরপত্রের আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু ক্রেতা খুঁজে পায়নি।
বিপিডিবি ও শ্রেডা কর্মকর্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সহযোগিতায় দেশের বায়ু বিদ্যুৎ
শক্তি নিয়ে বেশকিছু মূল্যায়ন গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।
সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআডি) আর্থিক সহযোগিতায় ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরি(এনআরইএল) সারাদেশের বায়ু বিদ্যুতের সম্ভাব্যতা যাচাই করে নয়টি স্থানকে নির্ধারণ করেছে।
স্থানগুলোর গড় বাতাসের গতি প্রতি সেকেন্ডে ৫-৭ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৬০-৮০ মিটার। স্থানগুলো হলো নাটোরের লালপুর, চাঁদপুর, সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রামের পারকে বিচ, ময়মনসিংহের গৌড়িপুর, হবিগঞ্জের মধুপুর চা বাগান খুলনার মোংলা বন্দরের নিকটবর্তী এলাকা দাকোপ, কক্সবাজারের ইনানী বিচ এবং রংপুরের বদরগঞ্জ।
বিদ্যুৎ বিভাগে এনআরইএন এর জমা দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব যে সকল এলাকায় ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে প্রতি সেকেন্ডে বাতাসের গতি ৫ দশমিক ৭৫ থেকে ৭ দশমিক ৭৫ থাকে।
সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতা আদায়ে তাদের সামনে জায়গা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বায়ু বিদ্যুতের নির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরতে বাস্তবায়নকারী
সংস্থা ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্পের বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সপ্তাহে ২ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে