বেলারুশিয়ান-বাংলাদেশি দম্পতির সাংসারিক জীবনের খুনসুটি ভরা মজার মজার ভিডিও হাস্যরসে ভরিয়ে তুলেছে সামাজিক মাধ্যম। মেয়ে বেলারুশের, নাম নাতালিয়া। আর ছেলে বাংলাদেশি, নাম হাবিব। ঘোরাঘুরি, কেনাকাটা, রান্নাবান্না, খেলাধুলাসহ জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে ছড়িয়ে থাকা হাসির উপাদানগুলো দর্শকদের উপহার দিচ্ছে এই দম্পতি। এছাড়া বাংলাদেশের সমসাময়িক ঘটনার সাথে হাস্যরস মিশিয়ে নির্মল আনন্দের খোরাক যোগাচ্ছে তাদের ইউটিউব চ্যানেলটি। পাশাপাশি তাদের ফুটফুটে ছোট্ট মেয়েটিও ভিডিওগুলোর মধ্যমণি হয়ে থাকছে। চলুন, ভাইরাল হওয়া এই দ্বিজাতি দম্পতির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিই।

হাবিব-নাতালিয়ার সম্পর্কের শুরুটা

বিশ্ববিখ্যাত ফুটবল ক্লাব জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখের অফিসিয়াল স্টেডিয়াম আলিয়াঞ্জ অ্যারিনায় ঘটনাক্রমে একসাথে কাজ করতে হয়েছিল হাবিব ও নাতালিয়াকে। সময়টা ছিল ২০১২ সাল এবং সে সময় জার্মানির এক বিখ্যাত উৎসব অক্টোবর ফেস্ট চলছিল। আর সেই মেলাতেই খুব সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটানোর মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে হাবিব ও নাতালিয়ার মধ্যে। এই বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে পরিণত হয় পরিণয়ে। অবশেষে ২০১৭ সালের ৯ জুলাই জার্মানির খেম্নিজে তাদের বিয়ে হয়।

আরও পড়ুন: চরকিতে রায়হান রাফির প্রথম অনলাইন সিনেমা ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’

হাবিব ও নাতালিয়ার ব্যক্তি জীবন

হাবিব লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের ছেলে। আত্মীয়-স্বজনরা সবাই ঢাকায় থাকে। বাবার কাজের কারণে হাবিবের সময় কেটেছে সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগে।

২০১২ সালে জার্মানি চলে যান উচ্চশিক্ষার জন্য। সেখানে মিউনিখ শহরের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ থেকে মাস্টার্স করেন। পড়াশোনা শেষে এখন একটি জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সাল্টিং ফার্মে ইন্টার্ন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন।

অপরদিকে নাতালিয়ার জন্মস্থান চেক-এর রাজধানী প্রাগে। তার আত্মীয়রা থাকেন বেলারুশের রাজধানী মিনাস্কের নিকটস্থ বাবরুস্ক শহরে। ২০১০ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য জার্মানির মিউনিখে চলে যান। সেখানে লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসিতে ভর্তি হন। পড়াশোনা সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার আগেই ফার্মাসিস্ট হিসেবে একটি কোম্পানিতে ইন্টার্ন হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যান। এখন পর্যন্ত সে কোম্পানিতেই স্থায়ীভাবে কাজ করছেন নাতালিয়া।বর্তমানে মেয়ে নাদিয়াসহ হাবিব-নাতালিয়া জার্মানির স্থায়ী বাসিন্দা।

আরও পড়ুন: আপন ঠিকানা : হারানো স্বজনদের খুঁজে পেতে আরজে কিবরিয়ার মহৎ উদ্যোগ

সামাজিক মাধ্যম জুড়ে দ্বিজাতি দম্পতির খুনসুটি

মহামারি করোনার কারণে অনির্দিষ্টকালের লকডাউনের সময়টুকু উপভোগ্য করে তোলার জন্যই তাদের সামাজিক মাধ্যমে এই ভিডিও আপলোডের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবিবঃ দ্য মিক্স ম্যাচ ফ্যামিলি’ নাম দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজ খুলেন।

হাসিখুশি নাতালিয়ার ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা বচন, দাম্পত্য জীবনের খুনসুটি আর ছোট্ট নাদিয়ার খেলাধুলার মজার ভিডিওগুলো খুব স্বল্প সময়েই লাখ লাখ দর্শকের মন জয় করে নেয়। পাঁচ মাসেই হাবিব-নাতালিয়া দম্পতি পেয়ে যান ইউটিউব সিলভার প্লে বাটন। এখন পর্যন্ত তাদের ইউটিউব চ্যানেলের সাব্স্ক্রাইবার সংখ্যা সাড়ে তিন লাখেরও বেশি। এ পর্যন্ত চ্যানেলটি ভিউ পেয়েছে সর্বমোট ১২৫ মিলিয়নেরও বেশি। ফেসবুকে পেইজটি নয় লাখেরও বেশি মানুষ ফলো করেন।

আরও পড়ুন: হলিউড ক্ল্যাসিক ‘ফরেস্ট গাম্প’ এর হিন্দি রিমেকে একসাথে বলিউডের তিন খান

বাংলাদেশি প্রথা, সংস্কৃতি নিয়ে নাতালিয়ার প্রতিক্রিয়া, হাবিবের ওপর বেলারুশিয়ান প্রভাবগুলো তুলে ধরার সময় তাদের স্বতঃস্ফূর্ততা আরও বেশি আনন্দায়ক করে তুলেছে ভিডিওগুলোকে।

পাশাপাশি তাদের একমাত্র মেয়ে নাদিয়ার ভূমিষ্ঠ থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রথম কর্মকাণ্ড তারা বায়োস্কোপের মত ফ্রেমবন্দি করেছেন। ‘নাদিয়া সোনামণি’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলও খোলা হয়েছে ২০২১ এর ৩ মে’তে।

আরও পড়ুন থটস অফ শামস: মজার সব চরিত্রে এককভাবে অভিনয়কারী প্রতিভাবান কন্টেন্ট নির্মাতা

হাস্যরস ছাড়াও তাদের ভিডিওগুলোতে কিছু শিক্ষণীয় বার্তাও থাকে। নারী দিবস, সাংসারিক কাজে নারী-পুরুষ সমতা, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে করণীয় প্রভৃতি বিষয়গুলো নির্মল আনন্দের ভেতর দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।

পরিশিষ্ট

চলতি মাসের ১২ অক্টোবর ব্লগে হাবিব-নাতালিয়া তাদের বাংলাদেশ সফরের কথা ঘোষণা করেন। ডিসেম্বরে বড়দিনের ছুটিতে তারা বাংলাদেশে আসবেন এবং এবার তারা তাদের বিবাহের অনুষ্ঠান বাংলাদেশি প্রথা অনুযায়ী উদযাপন করবেন। যেহেতু নাতালিয়া-নাদিয়া মা-মেয়ের কারোরই বাংলাদেশে আসা হয়নি, তাই স্বামী অথবা বাবার দেশ ভ্রমণটা নিঃসন্দেহে তাদের জন্য অন্যান্য ভ্রমণ থেকে একটু আলাদা হবে। মেয়ে নাদিয়াকে নিয়ে হাসিখুশি দম্পতি হাবিব-নাতালিয়ার বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য রইলো শুভ কামনা।

আরও পড়ুন: নাজমুন নাহার: পৃথিবীর ১৫০তম দেশ ভ্রমণ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাংলাদেশি পরিব্রাজক