অনেকে কল্পনাও করতে পারেননি যে বার্ষিক হজ পালনও এক দিন কেবলমাত্র সৌদি আরবের ভেতরে থাকা কিছু সংখ্যক মুসলমানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এটিও আজ বাস্তবতা।
কোরবানির জন্য গবাদি পশু কেনা মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলেও, করোনার কারণে এটিও এবার কঠোর বিধিনিষেধের সাথে পালন করা হবে।
সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গবাদি পশুর হাট থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য সরকার ইতিমধ্যেই কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং মৃত্যুর মধ্যে, গবাদি পশু ক্রয়-বিক্রয়ের একটি বড় অংশ এ বছর অনলাইনে সম্পন্ন হতে পারে।
বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে অনলাইনে গবাদি পশুর বাণিজ্য গতি লাভ করেছে এবং এ বছর তা পূর্ববর্তী সব সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধ করার জন্য, ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যেখানে এবার অফলাইন হাটগুলোর চেয়ে বেশি পশু বিক্রি হতে পারে।
অনেক ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ এবং পেজ’র মাধ্যমে বুকিং নিচ্ছেন।
সরকার নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘ফুড ফর নেশন’ মঙ্গলবার থেকে কোরবানির পশু বিক্রেতাদের নিবন্ধন শুরু করেছে।
আইসিটি বিভাগের সহায়তায় নিজেদের ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ’ ব্যানারের আওতায় ডিজিটাল হাটের এ উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে ইনোভেশন ডিজাইন এবং এন্টারপ্রেনারশিপ একাডেমি (আইডিইএ)।
এছাড়া বিভিন্ন স্থানে কাজ শুরু করেছে স্থানীয় অনেক ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ। পশু বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অনলাইন বাজারে আরও ভালো সাড়া পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী খামার মালিকরা।
হামদান এগ্রো প্রকল্পের মালিক ইফতেখার আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, করোনভাইরাসের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির কারণে শহরের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেকেই এবার কোরবানির পশু কেনার জন্য অনলাইন বাজার বিবেচনা করবেন।
অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে যারা সংশয়ে ছিলেন তাদেরও এবার এ পথ বেছে নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে গবাদি পশু বিক্রি করলে খামারি বা কৃষকরাও উপকৃত হবেন, কারণ এর মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের খরচ হ্রাস পাবে।’
তিনি আরও বলেন, মহামারির এ সময়ে কেউ যদি হাটে ঘুরে কোরবানির জন্য পশু কেনার পরিকল্পনা করেন তাহলে যেকোনো সময়ই তার করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
‘পশু খামারিরা এ বছর সরবরাহের চেয়ে গবাদি পশুর চাহিদা আরও বাড়তেও দেখতে পারেন,’ যোগ করেন ইফতেখার আহমেদ।
গবাদি পশু বিক্রির জন্য তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজটি ঢাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছে উল্লেখ করে ইফতেখার ইউএনবিকে বলেন, ‘আমি ঈদের ৭-১০ দিন আগে বুকিং নেয়া শুরু করব এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে গবাদি পশুগুলোকে একবারে সরবরাহ করব।’
অনলাইনে পশু ব্যবসার উত্থানের কথা বলতে গিয়ে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল ইউএনবিকে বলেন, এ বছর অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এখনই আনুমানিক বিক্রয় সংখ্যার পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
তমাল ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে লেনদেনগুলো পর্যবেক্ষণ করার পরে একটি আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারব।’
কিছু দিনের মধ্যে গবাদি পশুর ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সুবিধার্থে ই-ক্যাব একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
ইউএনবিকে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে আগামী বছরগুলোতে অনলাইনে কোরবানির পশুর বিক্রয় অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে।’
সারা দেশে মোট কোরবানির পশু বিক্রির ৩০ শতাংশ অনলাইনে সম্পন্ন হয়েছে বলে ২০১৮ সালে ইউএনবিকে জানিয়েছিলেন তমাল। এর দুই বছর পর এসে ভিন্ন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিক্রয়ের সেই হার ৫০ শতাংশেরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং বিভিন্ন ঝামেলা এড়িয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই সময় সাশ্রয় করাসহ অনলাইন বাণিজ্যের বিভিন্ন সুবিধার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি, অনলাইনে লেনদেন করার আগে জনসাধারণকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল।