সরকারি হিসেব মতে, জেলায় ৩ হাজার ৩২টি খামার থেকে প্রতিদিন ৪ লাখ লিটার দুধ উত্তোলন হচ্ছে। যশোরের জনসংখ্যা ২৭ লাখ ৬৪ হাজার হিসেবে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী মাথা প্রতি ১২০ মিলি লিটার দুধ গ্রহণ করলে শুধু পান করা দুধের চাহিদা দাঁড়াবে প্রতিদিন সাড়ে ৩ লাখ লিটার। মানুষ দুধ না খাওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থায় দুধ প্রক্রিয়াজাত করার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: যশোরের বাঁধাকপি যাচ্ছে সিঙ্গাপুরে
তবে সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে যশোর ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং দুগ্ধ সমবায় সমিতি বিক্রির বাজার বাড়ানোসহ দুধ সংরক্ষণে প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর ও খামারি সূত্র জানায়, জেলায় ছোট-বড় ৩ হাজার ৩২টি ডেইরি খামার রয়েছে। সর্বনিম্ন ৩টি গাভী নিয়ে গড়া খামার হিসেবে সদর উপজেলায় রয়েছে ৬৭০টি খামার। এর মধ্যে ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং দুগ্ধ সমবায় সমিতির ব্যানারে রয়েছে ৪০টি বড় ডেইরি খামার।
আরও পড়ুন: নতুন ভবন পাচ্ছে যশোর সদর উপজেলার ১৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়
প্রাণি সম্পদ দপ্তরের হিসেব মতে, খামারের বিপরীতে যশোরে প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার লিটার। এই বিশাল উৎপাদনের বিপরীতে বিক্রির বাজার সংকীর্ণ বলে দাবি খামারিদের। সংরক্ষণ কিংবা প্রক্রিয়াজাতে সুযোগ না থাকায় ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এছাড়া খুচরা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আবার চাহিদা না থাকায় জেলায় প্রায় ৫০ হাজার লিটার দুধ প্রতিদিন গাভীর বানে রেখে দেয়া হচ্ছে বলেও দাবি খামারিদের।
যশোরে ছোট ও বড় খামারিদের চলমান লোকসান কাটাতে দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণে বিশাল কর্মপরিকল্পনা জরুরি। তাই ডেইরি রেভুলেশন প্রকল্প, খামারিদের আয় বৃদ্ধি, দুধের উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং মূল্য সংযোজন পণ্য উৎপাদনেও কাজ করা যেতে পারে। জেলা শহরের সুবিধাজনক জায়গায় দুধ প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপনসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে সমবায় ভিত্তিক সিলিং প্লান্ট বসানোর পরিকল্পনার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন খামারিরা।
আরও পড়ুন: যশোর, সৈয়দপুর ও রাজশাহী বিমানবন্দরের উন্নয়নে ৫৬৭ কোটি টাকা
সদর উপজেলার ডেইরি খামারিদের নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং দুগ্ধ সমবায় সমিতি যশোরের সভাপতি মফিজুর রহমান জানান, তার জানামতে এই মুহূর্তে সমিতিভুক্ত ৪০টিসহ সদর উপজেলায় ২০০টি খামারের নাজুক অবস্থা চলছে। এছাড়া পুরোজেলার একই চিত্র। পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধি, শ্রমিক মূল্য দিয়ে বাজারজাত খরচ, সব মিলিয়ে দুধ বিক্রিতে লোকসান হচ্ছে। এছাড়া করোনা সংকটের কারণে উৎপাদিত সব দুধ বিক্রিও হচ্ছে না। আর যশোরে সংরক্ষণ কিংবা প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা না থাকায় দুধ বানে রেখে দেয়া হচ্ছে। বিশাল পরিমাণের দুধ বিকল্প ব্যবহারের উপায় খুঁজে মানুষকে খাওয়ানো গেলে যশোরের ডেইরি খামার সেক্টর ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তিনি।
খামারিদের দাবি, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কিংবা সমবায় অধিদপ্তর একটু আন্তরিক হলে দ্রুতই যশোরের খামারিদের ভাগ্য উন্নয়ণে কাজ করতে পারে। দুধ উৎপাদনের বিপরীতে সংরক্ষণ ও মূল্য সংযোজন পণ্য উৎপাদনও করা যেতে পারে। বিশেষ করে গুড়ো দুধ তৈরি বা কোমল পানীয়তে দুধ ব্যবহার করে দুধের বিকল্প ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়া দুগ্ধ ব্যবহার বাড়িয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে এমন উপায়ে দই, মিষ্টি, এমনকি দানাদার তৈরি কারখানাও করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে দ্রুত যশোরে মিল্ক প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপন দাবি জানিয়েছে তারা।
আরও পড়ুন: থমকে গেছে যশোরের সুলতানি আমলের মসজিদের সংস্কার কাজ
খামারিরা মনে করেন যশোরে প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা গেলে খামারগুলো এগিয়ে যাবে। একই সাথে দুধের চাহিদা পূরণ করেও অন্য জেলায় সরবরাহ করা যাবে। এ ব্যাপারে সমবায় সমিতির মাধ্যমে তারা উদ্যোগ নিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় সরকারি ঋণ সুবিধা পাওয়া গেলে যশোরে প্রসেসিং কেন্দ্র করা যেতে পারে।
যশোর সদর উপেজলা সমবায় অফিসার রনজিত কুমার দাশ জানিয়েছেন, দ্রুতই সমন্বিত সমবায় ভিত্তিক মিল্ক প্রসেসিং প্লান্ট করার দিকে এগুনো হচ্ছে। যশোরে একটি সুবিধাজনক জায়গায় জমি খোঁজা হচ্ছে। প্রস্তাবনা আকারে মোটা অংকের ঋণের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সমবায় ভিত্তিক সিলিং প্লান্ট বসানোও হতে পারে। সব মিলিয়ে নিরাপদ দুধ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে যশোরে একটি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হবে।