এ বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী স্মরণে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এশিয়া একাদশ এবং বিশ্ব একাদশের মধ্যে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে পরিকল্পনাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়।
ক্রিকেটে বাংলাদেশের হতাশার এ বছরটি শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে। এটি ছিল ১২ বছরের মধ্যে পাকিস্তানে বাংলাদেশ দলের প্রথম সফর। দীর্ঘ আলোচনার পর সিরিজটি তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়।
প্রথম পর্যায়ে, তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে মুখোমুখি হয় উভয় দেশ। এতে ২-০ ব্যবধানে জয় পায় পাকিস্তান এবং শেষ ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়।
ওয়ানডে টুর্নামেন্টের জন্য ৩ দল ঘোষণা বিসিবির
জানুয়ারিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পরে, গত ফেব্রুয়ারিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে পাকিস্তান সফরে যায় বাংলাদেশ দল। সেই টেস্ট ম্যাচেও পরাজিত হয় টাইগাররা। বাকি টেস্ট ও একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে গত এপ্রিলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরের কথা থাকলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সিরিজের সেই অংশ স্থগিত করতে বাধ্য হয় উভয় পক্ষ।
পাকিস্তান সফরের দ্বিতীয় পর্বের পরপরই জিম্বাবুয়েকে একটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে এবং দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ।
মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে বাংলাদেশ
টেস্ট ফরম্যাটে মুশফিকুর রহিমের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডের মধ্য দিয়ে টেস্ট ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ। ওই সিরিজের অন্যান্য ম্যাচগুলোতেও জয় পায় টাইগাররা।
সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে লিটন দাস ১৬টি চার ও আট ছক্কার সাহায্যে ১৪৩ বলে করেন ১৭৬ রান, যা ওয়ানডেতে কোনো বাংলাদেশি খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড। রেকর্ডটি তৈরির পথে লিটন ছাড়িয়ে যান তার উদ্বোধনী সঙ্গী তামিম ইকবালকেও যিনি সেই ম্যাচে করেন ১২৮ রান।
একই ম্যাচে আরও একটি রেকর্ড গড়েন লিটন-তামিম জুটি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই ম্যাচের উদ্বোধনী জুটিতে ২৯২ রান তুলে নেন তারা। এর আগে ২০১৭ সালে কার্ডিফে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ২২৪ রানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ।
কোভিড থেকে মুক্তি পেলেন মাহমুদুল্লাহ
ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের পরে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা প্রস্তুতি নেন ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্ট ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের জন্য। তবে দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে প্রথম ছয়টি ম্যাচের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য টুর্নামেন্টটি স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে সেপ্টেম্বরের আগে পর্যন্ত ক্রিকেটের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে মাসব্যাপী লকডাউন শেষে ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেন বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়।
পরে একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে টাইগারদের শ্রীলঙ্কা সফরের কথা থাকলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আবারও মারাত্মক আকার ধারণ করায় সিরিজটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপের পর্দা উঠছে মঙ্গলবার, ফেবারিট তকমা খুলনার
একই কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজসহ বাংলাদেশের অন্তত ১৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ পিছিয়ে দেয়া হয়।
শ্রীলঙ্কা সিরিজ স্থগিত হওয়ার পর বোর্ড ঘরোয়া ক্রিকেটকে মাঠে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে মনোনিবেশ করবে বলে ঘোষণা দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। সেই ঘোষণা অনুযায়ী, নভেম্বরে দেশের শীর্ষ ক্রিকেটারদের নিয়ে তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে প্রেসিডেন্টস কাপের আয়োজন করে বিসিবি।
করোনা সংক্রমণ রোধে এ টুর্নামেন্টে খেলোয়াড়, কোচ, সংশ্লিষ্ট কর্মী এবং অন্যান্য যারা এটি আয়োজনের সাথে জড়িত ছিলেন তাদের জন্য কঠোর স্বাস্থ্য সতর্কতার বলয় তৈরি করে বিসিবি।
টি-টোয়েন্টিতে ৫ হাজার রানের মাইলফলকে সাকিব
প্রেসিডেন্টস কাপ আয়োজনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিসিবি এরপর আয়োজন করে চলতি বছরের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ ২০২০। পাঁচটি দল নিয়ে শুরু হওয়া এ টুর্নামেন্ট শেষ হয় গত ১৮ ডিসেম্বর।
এ টুর্নামেন্টকে চলতি বছরের বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একমাত্র ইতিবাচক বিষয় হিসেবে দেখছেন অনেকে। কারণ বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে অংশ নেয়া সব ক্রিকেটারই ছিলেন বাংলাদেশি এবং প্রতিভাবান স্থানীয় খেলোয়াড়রা পেয়েছিলেন এ ফরম্যাটে নিজেদের প্রমাণ করার সুবর্ণ সুযোগ।
টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত কিছু পাফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, পারভেজ হোসেন ইমন, আনিসুল ইসলাম ইমন, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসানের মতো তরুণ ক্রিকেটাররা।
এছাড়া, নিজেদের জাত চিনিয়েছেন জাতীয় দলের খেলোয়াড় মুস্তাফিজুর রহমান এবং লিটন দাসও। এ ইভেন্টের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন মুস্তাফিজ, আর সেরা ব্যাটসম্যানের পুরস্কার পান লিটন।
মুস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে খুলনাকে হারাল চট্টগ্রাম
দুই মাসের মধ্যে দুটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে ঘরের মাঠে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে দ্বার উন্মুক্ত করেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের সময় ক্রিকেটার এবং অন্য কর্মীদের জন্য বিসিবি কেমন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছিল তা তদারকি করতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপে তরুণদের জ্বলে ওঠায় উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখছেন বিসিবি প্রধান
ঢাকা এবং চট্টগ্রামে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ এবং পরে বাংলাদেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
২০২০ সালের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির পর ২০২১ সালে আরও বেশি ক্রিকেট খেলার প্রত্যাশায় এখন বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পর নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে টাইগারদের।
বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপের শিরোপা খুলনার ঘরে
২০২১ সালে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও অংশ নেবে বাংলাদেশ। বছরের শেষের দিকে টুর্নামেন্টটি ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।