গত এক সপ্তাহে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত মানুষজন খোলা আকাশের নিচে রোদ শুকিয়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের পাশ দিয়ে খরস্রোতা তিস্তা বয়ে চলছে। এখানে ভয়াবহ ভাঙন চলছে। গত ৩-৪ বছরের ভাঙনে এ ইউনিয়নের তিন ভাগের দুই ভাগ এলাকা নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে গত দেড় মাস ধরে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও কোনোভাবে ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।
এদিকে, পাউবোর শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ থেকে মাটি কেটে জিও ব্যাগ ভরার অভিযোগ উঠেছে। ফলে ওই এলাকা দিয়ে যানবাহন চলাচল আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বাঁধের ৫০ ফুট দূর থেকেই ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা কতটুকু পরিবেশবান্ধব তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ভাঙনকবলিত চতুরা ও কালিরহাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, খোলা আকাশের নিচে বেশ কয়েকটি ভাঙা বাড়ি পড়ে আছে।
কালিরহাট এলাকার পূর্ণিমা চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাড়িঘর, জমিজমা, গাছপালা সব নদী কেড়ে নিয়েছে। চার দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছি। জায়গা না পেয়ে ঘরবাড়ি রাস্তায় ফেলে রেখেছি। এখন কী করব জানি না।’
চতুরার হংসধর বাঁধের মাথা এলাকায় আহাম্মদ আলীর রাত কাটে নির্ঘুম। ঘরের উঠোনে চলে এসেছে নদী। যেকোনো মুহূর্তে তার বসতঘরটি বিলীন হয়ে যেতে পারে। আতঙ্ক আর উদ্বেগে সময় কাটছে তার পরিবারের লোকজনের।
তিনি জানান, বিদ্যানন্দ বাজার, তৈয়ব খাঁ, ডাংরা, ডাবুরহালান, ডারিয়া, হংসধর ও কালিরভিটাসহ সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙছে তিস্তা নদী। গত এক সপ্তাহে ভেঙে গেছে চতুরার মনতাজ আলী, আমজাদ আলী, হাফিজুর রহমান, আলী মন্ডল, মমতাজ, আইজুল ও জমির হোসেনের বাড়ি।
স্থানীয় জয়ন্তী রানী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘বাপুরে বাড়ি আগুনে পুড়লেও ভিটাটা থাকে। কিন্তু নদী খাইলে কিছুই থাকে না।’
চতুরা এলাকার আজাদ ও কামরুল জানান, এখানে পাউবোর শ্রমিকরা বাঁধ নষ্ট করে মাটি কেটে জিও ব্যাগে ভরছেন। এখন রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের প্রশ্ন করা হলে তারা জানান, বাঁধ থেকে মাটি কেটে জিও ব্যাগ ভরছেন আবার ড্রেজার দিয়ে সেটা পূরণ করছেন। বাঁধ থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরেই বসানো হয়েছে সেই ড্রেজার।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নে আগে ভোটার ছিল ২৯ হাজার, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজারে। ১১টি মৌজার মধ্যে ৭টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
জিও ব্যাগ ফেলা হলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি এ বিষয়ে দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান সরকারের কাছে।
জেলা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ বাঁধ কেটে মাটি ভরার কাজ করে থাকলে সেটা আমাদের জানা নেই। আমরা চর থেকে নৌকায় বালু এনে কাজ করছি। আর ড্রেজারের কাজ এখন বন্ধ রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, ‘ভাঙনকবলিতদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার কাজ করছে। আমরা ফিজিবিলিটি দেখে স্থায়ীভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করব।’