স্থানীয়রা জানান, বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তারা। সেই সাথে থামছে না পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন। প্রতি বছর বর্ষা এলেই প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও সারা বছর পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন নিয়ে প্রশাসন নির্বিকার থাকেন এমন অভিযোগ রয়েছে। ফলে এ বর্ষা মৌসুমে খাগড়াছড়িতে আবারও পাহাড় ধসে জানমালের ক্ষতির শঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে প্রশাসন। ধস রোধে পাহাড় কাটা বন্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলছে জেলা প্রশাসন ।
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে খাগড়াছড়ি জেলায় দেখা দিয়েছে পাহাড় ধস। সেই সাথে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী এসব পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। কয়েকদিনের টানা বর্ষণে খাগড়াছড়ি শহরের সবুজবাগ, শালবাগান, কুমিল্লটিলা, কলাবাগানসহ শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। পাহাড় ধসে দুটি পাকা ঘরবাড়িও ভেঙে গেছে। এছাড়া বেশকিছু ঘরবাড়ি ধসে গেলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বৃষ্টি বাড়লে এসব জায়গায় ধসের শঙ্কা করছে প্রশাসন। তবে মাইকিং করেও বসবাসকারীতে সরানো যাচ্ছে না।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের ঢালে ঢালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে ৩৫ হাজার পরিবার। বিগত বছরগুলোতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে, শহরের বেশ কয়েকটি স্পটে পাহাড় কেটে বা পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ বেড়ে চললেও পাহাড় কেটে বাড়িঘর নির্মাণ বন্ধে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
অপরদিকে, পাহাড়ে পাদদেশে বসবাসকারীরা বলছে, থাকার জায়গা নাই তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।
পাহাড়ের পাদদেশে বাসবাসকারীরা বলেন, আমরা গরীব মানুষ। কাজ কাম করে থাকি। এখানে পাহাড়ে ঘর করে থাকি। বৃষ্টি আসলে মাটি ভাঙা শুরু হয়। আমরা ঝুঁকি নিয়েই আছি। বৃষ্টি বাড়লে পাহাড় ধসের ভয়ে আমাদের রাতে ঘুম হয় না। ছেলে মেয়ে নিয়ে আতঙ্কে বসে থাকি।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সু-রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী জানান, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অন্যত্র পুনর্বাসনের উদ্যোগ না নিলে ভয়াবহ প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘পৌরসভা ও জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে কাজ করছে। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। পৌর এলাকায় সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে।’
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, পাহাড় ধস রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ হিসেবে পাহাড় কাটা বন্ধের উপর জোর দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাহাড় কেটে কেউ রক্ষা পাবে না । পাহাড় কাটা বন্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলার এ শীর্ষ কর্মকর্তা । এদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানো হবে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, পৌর এলাকায় ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ৩ হাজার পরিবারসহ পুরো জেলায় ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় ৩৫ হাজার পরিবার।