এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় সাতশত মালো পরিবার রয়েছে। মালোদের বসবাস উপজেলার হিতামপুর বোয়ালিয়া, নাছিরপুর, কাশিমনগর, নোয়াকাটী, মাহমুদকাটী, বাঁকা, রাড়ুলী, শাহাপাড়া গ্রামে।
এসব গ্রামে বসবাসরত পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস সুমদ্রে মাছ ধরা। বছরের প্রায় ৪/৫ মাস বঙ্গপোসাগরের মোহনায় দুবলার চরে মহাজনের অধিনে মাছ ধরতে যায়। সেখানকার দুবলার চরের আলোর কোল, নারকেলবাড়ী এলাকায় মাছ শিকার করেন।
এসব জেলে ৪২ হাত দৈর্ঘ্য ও ১২ হাত প্রস্থের নৌকা নিয়ে অক্টোবরের শেষে সমুদ্রে পাড়ি জমান। আর মার্চ মাসে আবার বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। এক শ্রেণির মহাজনের কাছ থেকে এক লাখ টাকায় ১৫-২০ হাজার টাকা সুদে দাদন নিয়ে পথে নামেন জেলেরা। এভাবে সাত-আট জেলের নৌকাপ্রতি খরচ হয় ১০-১২ লাখ টাকা। বছরের বাকী সময় স্থানীয় নদ-নদীতে মাছ ধরে ও ক্ষুদ্র ব্যবসা করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে গোটা বিশ্ব থমকে গেছে। প্রভাব ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
বোয়ালিয়া মালোপাড়ায় সরেজমিনে ইউএনবির এই প্রতিনিধি দেখেন, জেলেদের নৌকাগুলি নদীর চরে পড়ে আছে। কাজ না থাকায় বেকার হয়ে তারা হতাশার মধ্যে দিন পার করছেন।
হিতামপুর বোয়ালিয়া মালোপাড়ার সুশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘করোনার কারণে নদীতে মাছ ধরতে পারছি না। আয় রোজগার বলে কোনো কিছু নেই। ধার দেনা করে চলছি। তার উপর মহাজনের কাছ থেকে নেয়া দাদনের টাকা পরিশোধ করার চাপ দেয়া হচ্ছে। খুব দুঃচিন্তায় পড়েছি।’
পরিমল বিশ্বাস বলেন, ‘সাগর থেকে যা আয় করেছিলাম তা বেশির ভাগ মহাজনকে দিয়েছি। এখন হাতে আর টাকা নেই। সংসারে খাবার নেই, তার উপর কাজ না থাকায় বেকার সময় পার করছি। মেম্বারের সাথে যাদের সম্পর্ক ভালো তারা ত্রাণ পেয়েছে। বাকী কেউ কিছু পায়নি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।’
রাড়ুলী মালোপাড়ার সুশান্ত বলেন, ‘আমরা মাছ ধরা ছাড়া অন্য কাজ পারি না। তাছাড়া সরকার ঘর থেকে আমাদের বের হতে দিচ্ছে না। তাহলে আমরা কি করে খাব। এই দুর্দিনে কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নেয় না। জানি না আমাদের কপালে কি আছে।’
ত্রাণের বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী দেশ বলেন, ‘আমরা কোনো কমিউনিটিকে ধরে ত্রাণ দিচ্ছি না। তারপরও সেখানে যারা পাওয়ার যোগ্য তাদের তালিকা করে চেয়ারম্যানদের কাছে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। তারপরও তারা কেন ত্রাণ পাচ্ছে না তা জানি না। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’