কৃষকরা জানিয়েছেন, পোকা দমনে নামিদামী কোম্পানির বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেও প্রতিকার মিলছে না।
ইউএনবির প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সুফি রফিকুজ্জামান জানান, গত বছর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের কৃষক গোলাম মল্লিকের ভুট্টা খেতে প্রথম এ ভয়াবহ পোকার অস্তিত্ব ধরা পড়ে।
‘পরে পরীক্ষার জন্য পোকার নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়। ২২ ডিসেম্বর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটি ফল আর্মিওয়ার্ম পোকা,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি ব্যাখ্যা করেন যে শীতকালীন আবহাওয়ার কারণে পোকাটি গত বছর খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি তবে ফল আর্মিওয়ার্ম এই মৌসুমে সময়ের আগেই ভুট্টা খেতে আক্রমণ করেছে।
খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএডব্লিউ) জানায়, এটি আমেরিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উষ্ণমঞ্চলীয় অঞ্চলের একটি পোকা যা ভুট্টা পছন্দ করে। তবে ধান, আখ, শাক-সবজি এবং তুলাসহ ৮০ টিরও বেশি প্রজাতির ফসল খেতে পারে।
এফএডব্লিউ প্রথমে ২০১৬ সালের গোড়ার দিকে মধ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকাতে এটি সনাক্ত করে। দ্রুত প্রায় সমস্ত সাব-সাহারা আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এটি ভারত এবং ইয়েমেনে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ডে দেখা দেয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর, দামুড়হুদা ও আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ইউএনবির এই প্রতিনিধি দেখেন, ভুট্টা নিয়ে চরম এক অনিশ্চয়তার প্রহর গুণছেন কৃষকরা। প্রতিটি মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ পোকা ফল আর্মিওয়ার্ম। পোকার এমন বিধ্বংসী আগ্রাসনে মলিন চুয়াডাঙ্গার হাজার হাজার ভুট্টা চাষির স্বপ্ন। তবে সদর উপজেলা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে।
সদর উপজেলার কুলচারা গ্রামের কৃষক আফসের আলি বলেন, ‘বিধ্বংসী পোকাটি প্রথমে গাছের মূল কেটে দিচ্ছে। এরপর গাছের কাণ্ডে অবস্থান করে ফল ধারনের কাণ্ডটি খেয়ে ফেলছে। এতে করে নষ্ট হচ্ছে ভুট্টা গাছ।’
তার দাবি, গত বছরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শক্তি নিয়ে আঘাত হানছে বিধ্বংসী পোকাটি। প্রতিদিনই বাতাসের বেগে ছড়াচ্ছে মাঠের পর মাঠ। আক্রান্ত খেতগুলোতে নামিদামী কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহারেও মিলছে না প্রতিকার, যোগ করেন তিনি।
আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী গ্রামের কৃষক শাহবুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছিলাম। এতে বিঘা প্রতি ১৩-১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু পোকার ভয়াবহ আগ্রাসনে তিন বিঘা খেতই নষ্ট হয়েছে।’
এখন মহাজন ও এনজিওর ঋণ কিভাবে শোধ করবেন তা ভেবেই রাতে ঘুমাতে পারছেন না তিনি।
দামুড়হুদা উপজেলার রামনগর গ্রামের কৃষক সফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ফসলের জন্য যমদূত ফল আর্মিওয়ার্মের ভয়াবহ আগ্রাসনের পরও মাঠে নেই কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
‘এমন বিপর্যয়ে কৃষি বিভাগকে পাশে না পেয়ে আমার মতো শত শত কৃষক ফসলের আশাও ছেড়ে দিয়েছেন,’ বলেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলী হাসান জানান, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার ৪৮ হাজার হেক্টরের মধ্যে ইতিমধ্যে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।
‘কিন্তু শুরুতেই খেতগুলোতে বিধ্বংসী পোকার আক্রমণে আবাদ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে পোকাটি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে,’ দাবি করেন তিনি।
এই কর্মকর্তা বলেন, পোকা দমনে তারা দিনরাত মাঠে কাজ করছেন। খেতে কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শও দিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তবে কি পরিমাণ জমিতে পোকার আক্রমণ হয়েছে তা তিনি জানাতে পারেননি।