উদ্বোধনের মাত্র ১৩ মাসের মাথায় বাতিগুলো অকেজো হয়ে গেছে। মেরামতের কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
যানবাহন ও লোকজন চলাচল করলেও অন্ধকারে সেতু পার হতে হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন সেতু ব্যবহারকারীরা। এছাড়া অন্ধকার থাকায় মাদকসেবীরা সেতুটিকে মাদক সেবনের জন্য বেছে নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলীর অধীনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দ্বিতীয় শেখ হাসিনা ধরলা সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ১শত ৯৬ কোটি ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল চুক্তি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশন। ২৬ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও পরে দুই দফায় সময় বাড়িয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে কাজ শেষ করে ।
সেতুটি দৈর্ঘ্য ৯৫০ মিটার, চওড়া ৩২ ফিট। ১৯টি স্প্যান, ২৪০টি পাইল, ১৮টি পিয়েল, ৯৫টি গার্ডারের ওপর সেতুটি নির্মিত। সংযোগ সড়কে ফুলবাড়ী অংশে ৮৪২ মিটার ও লালমনিরহাট অংশে দুই হাজার ৩০ মিটার কার্পেটিং করার জন্য ১২ কোটি ৬২ লাখ ১৫ হাজার ৩৩০ টাকা ব্যয় ধরা হয়। দুই রাস্তায় ৩ কিলোমিটার বৃক্ষরোপন করা হয়েছে। এ জন্য মূল সেতুর ব্যয় ধরা হয় ১২৯ কোটি ৮ লাখ ৩৬ হাজার ৪৫২ টাকা। নদী শাসনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ কোটি ৪৬ লাখ ৭৫ হাজার ৬১৮ টাকা ও সেতু বিদ্যুতায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ লাখ ৪ হাজার ২১০ টাকা।
২০১৮ সালে ৩ জুন দ্বিতীয় শেখ হাসিনা ধরলা সেতুটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিছু দিন যেতে না যেতেই সেতুর বাতিগুলোর অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ সেতু বিদ্যুতায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ লাখ ৪ হাজার ২১০ টাকা। সেতুর পশ্চিম পাশে ৩০ ফুট লম্বা ২১টি ও পূর্বপাশে একই মাপের ২০ স্টিলের পিলারের কিছু বাল্ব মিটমিট করে জ্বলচ্ছে। যাতে আলো নেই বললেই চলে।
নিম্নমানের সংযোগের তার লাগানোর কারণে এ অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাতে বিদ্যুৎ জ্বালানো থাকার কথা থাকলেও জ্বলচ্ছে না অধিকাংশ বাতি। বিদ্যুতের লাইনের কারণে মাঝে মাঝে সব কয়টি বাতি বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দীর্ঘ এক কিলোমিটার সেতুর ওপর পর্যাপ্ত আলো না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। সেখান বাতিগুলো একযোগে চালু না থাকায় সেতুটি দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে না। বিশেষ দিনগুলোতে দর্শাণার্থীরা সেতুতে ভিড় করলেও ভয়ে সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরে যান। আলো না থাকায় রাতে এই সেতুতে অপরাধীদের আনাগোনা বাড়ছে। মাঝে মধ্যে মাদকের আসর বসে। মাঝেমধ্যেই ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে।
সেতুর পাড়ের ফুচকা ব্যবসায়ী এরশাদুল ও সাইদুল জানান, অনেক আগে থেকেই অর্ধেকের বেশি বাতি জ্বলে না। আমাদের দোকানের শোলার আলো কয়েক মিনিট জ্বলে নিভে যায়। দোকানের আলোয় সেতুটিতে একটু আলো থাকে। কিন্তু দোকান বন্ধ হয়ে গেলে আবার সেই অন্ধকার।
উপজেলার ইলেট্রিক্যাল ব্যবসায়ী মুকুল জানান, নিম্নমানের তার দিয়ে ওয়ারিং করা হয়েছে। অনেক স্থানে তার জোড়াতালি দিয়ে সংযোগ দেয়ায় বাতিগুলো একযোগে আলো দিতে পারছে না। ডোপ তারগুলোতে অসংখ্য জোড়া দেয়া রয়েছে। তারগুলো নিরাপদ নয় যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
উপজেলা বিদ্যুতের অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ মোরশেদ আলম জানান, সেতুর পাশে চাহিদা মোতাবেক ট্রান্সফরমার রয়েছে। সেতুর ওপর বাতিগুলোর তারের সমস্যা রয়েছে। ভোল্টেজের কোনো সমস্যা নেই। ডোপ তারগুলো ভালোভাবে যাচাই বাছাই করলে সবগুলো বাতি একযোগে জ্বলবে।
উপজেলা প্রকৌশলী আসিব ইকবাল রাজিব জানান, ভোল্টেজের কারণে কিছু বাতি জ্বলচ্ছে না। যেগুলো সমস্যা হয়েছে তা কয়েকদিন আগে ঠিক করা হয়েছে। এখন সবগুলো বাতি কেন জ্বলচ্ছে না কেন তা দ্রুত ক্ষতিয়ে দেখা হবে।