গত বছরের সাম্প্রদায়িক হামলার ক্ষত ও আতঙ্ককে জয় করে বন্দরনগরীর হিন্দু সম্প্রদায় এ বছর ধুমধাম ও সৃজনশীল থিমের মধ্যে তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করছে।
শহরজুড়ে ২৮২টি মণ্ডপের মধ্যে একটি মণ্ডপ সবচেয়ে বেশি ভক্ত ও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করছে। আদিবাসী নারীর সাজে এখানে আবির্ভূত হয়েছেন দেবী দুর্গা।
দক্ষিণ নালাপাড়া পূজা উদযাপন পরিষদ তার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনে এই অনন্য থিম নিয়ে এসেছে। ‘পার্বণ’ (উৎসব) নামের মণ্ডপটি পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের জীবন ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরছে।
দুর্গা ও তার চার সন্তান লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের পোশাকে দেশীয় সংস্কৃতির উদযাপন দৃশ্যমান হয়ে ওঠেছে। পুরো মণ্ডপটি বাঁশ, বাঁশের কারুকাজ করা দেয়াল এবং আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবন থেকে অনুপ্রাণিত অন্যান্য উপকরণ দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: এক মণ্ডপে ১৫১টি প্রতিমা: দুর্গার পরিবারে আমন্ত্রিত যারা
থিম পরিকল্পনাকারী রাজিব বিশ্বাস রাজা বলেন, এবার পূজার থিমের নাম হচ্ছে পার্বণ। আদিবাসীদের জীবনধারা ও কর্মযজ্ঞ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে এখানে। বাঁশ ও বাঁশের বেড়া দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো পূজা মণ্ডপকে। মণ্ডপে প্রায় ১৪ হাজার বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। ভাবনা ও সৃজনে রয়েছেন বিশ্বজিৎ আইচ। পাঁচ মাস আগে থেকে আমরা এই কাজ শুরু করেছিলাম। দিন-রাত কাজ চালিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পেরে ভালো লাগছে। আশা করছি দর্শনার্থীদেরও কাছে আমাদের এই আয়োজন দৃষ্টিনন্দন হবে।
দুর্গা নিজেও মাথায় আদীবাসীদের মুকুট পরেছেন, বাঁশের তৈরি অলঙ্কার এবং তার শাড়ির মোটিফও দেশীয় ঐতিহ্য থেকে বেছে নেয়া হয়েছে। দেব-দেবী ছাড়াও অন্যান্য চরিত্র ছিল উপজাতীয় পুরুষ, মহিলা এবং শিশু। এদেরও উপজাতিদের পোশাক 'পিনন হাদি' পরানো হয়েছে। পূজা মন্ডপে বাদ্যযন্ত্রসহ নাচের মাধ্যমে উদযাপন করা হচ্ছে এ 'পার্বণ'।
দুর্গার নান্দনিক ও আদিম রূপের আভাস পেতে ইতিমধ্যেই দর্শনার্থীরা মণ্ডপে ভিড় করতে শুরু করেছেন।
এ বছর চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলায় মোট দুই হাজার ৬২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে বলে চট্টগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন।