ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতা ও অনেক প্রার্থী বার্তা সংস্থা ইউএনবি-কে বলেন, তাদের অনেক নির্বাচনী পোলিং এজেন্টকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আবার অনেক এজেন্ট হয়রানি ও গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
কোনো কোনো প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, তাদের অনেক পোলিং এজেন্টকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করায় সংশ্লিষ্ট ভোট কেন্দ্রগুলোতে নতুন করে পোলিং এজেন্ট দেয়া নিয়ে তারা গভীর সমস্যায় পড়েছেন।
এছাড়াও ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও প্রার্থীদের অভিযোগ, প্রাক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সহিংসতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভীতি ছড়ানোর কারণে সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কে আছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছের এক নেতা ইউএনবিকে বলেন, তাদের অনেক প্রার্থী একটি ‘অসমতল নির্বাচনী প্রক্রিয়া’ থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুমতি চেয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে ফোন দিচ্ছেন। ওইসব প্রার্থীরা জানান, এটি একটি ‘অকার্যকর ও বেহুদা নির্বাচন’। কারণ ভোটের আগেই তাদের পোলিং এজেন্টদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং অনেককে ভোটকেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, ভোটের আগে গ্রেপ্তার এড়াতে তারা তাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক ও নিরাপদ স্থানে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। ‘কিভাবে তারা দায়িত্ব পালন করবে এবং জালভোট প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন করবে সে বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়েছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নেতা আরও বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে তাদের প্রার্থীর এজেন্ট উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য কিছু কৌশল নিয়েছেন। ভোটাররা যাতে সকল বাধা ও ভয় অতিক্রম করে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন এজন্য তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। ‘আমরা বিশ্বাস করি, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে পরিস্থিতি বদলে যাবে, বলেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ঢাকা-৩ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রতিপক্ষের ভয়াবহ হামলায় আমি গুরুতর আহত। কিন্তু আমরা ভয় পাইনি, আমাদের এভাবে দমন করা যাবে না।
তিনি বলেন, যত কিছুই হোক না কেন, তারাই জয়ী হবেন। জনগণ সব বাধা অতিক্রম করে ভোট বিপ্লব আনবে।
তবে এক প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য প্রার্থীর মতো তিনিও বলেন, তিনি তার এজেন্টদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
লক্ষ্মীপুর -৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আমরা একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন করছি। আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তার অনেক নির্বাচনী এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যদের গ্রেপ্তারেও পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি ও অভিযান চালাচ্ছে। ‘পুলিশের গ্রেপ্তার ও হয়রানি এবং সরকার দলীয়দের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে’, বলেন তিনি।
জাতীয় সামাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক এবং কুমিল্লা-৪ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী আবদুল মালেক রতন বলেন, জনগণ খুবই আগ্রহ নিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু বিরোধীদের গণগ্রেপ্তারে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
তার সম্ভাব্য নির্বাচনী এজেন্টদের নাম এখনো প্রকাশ করেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারপরও বেশ কিছু এজেন্টকে পুলিশ ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক এবং বগুড়া-২ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তার পাঁচজন নির্বাচনী এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযানে যাচ্ছে। এর মধ্যে দিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি আমার এজেন্টদের নাম প্রকাশ করিনি। কিন্তু পুলিশ এজেন্ট সন্দেহে অনেককে গ্রেপ্তার করছে। যাদের মধ্যে পাঁচজন এজেন্ট রয়েছে।
মান্ন বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা এবং প্রতিপক্ষের ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা মানুষকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।
গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি ও ঢাকা-৬ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী সুব্রত চৌধুরী বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) তার নির্বাচনী এলাকায় ভোট গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বলছে। ‘আমি বুঝতে পারছি না, মানুষ ভোটকেন্দ্রে যদি না-ই যেতে পারে, তাহলে কিভাবে ভোট হবে।’
তিনি বলেন, তার নির্বাচনী এজেন্টরা গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ বিরোধীদের গ্রেপ্তারে তাদের অবস্থানগুলোতে টহল দিচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা বিএনপি এজেন্ট এবং সমর্থকদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করছে। প্রতিটি গ্রামে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা মহড়া দিচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার চাচ্ছেন সেনাবাহিনীকে বিলম্বে মাঠে নামাতে। সেনাবাহিনীকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের তত্ত্বাবধানে সবকিছুই চলছে।
এমন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও রবিবার দেশে ভোট বিপ্লব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি আরও দাবি করেন, গত কয়েকদিনে সারাদেশে বিএনপির ১০ হাজার ৩২৯ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।