যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) দক্ষিণ এশিয়া এবং কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড তারিক আহমদ ইউএনবির কিছু প্রশ্নের জবাব বলেন, ‘রাখাইনজুড়ে মানুষের মধ্যে থাকা উদ্বেগ সমাধানে নতুন সরকারকে কাজ করতে হবে।’
২০১১ সালে সামরিক শাসনের অবসানের পর দ্বিতীয়বারের মতো হওয়া ৮ নভেম্বরের জাতীয় নিবাচনে রাখাইন রাজ্য ও রোহিঙ্গা ছাড়া মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ ভোট দিয়েছেন।
মিয়ানমারে এ নির্বাচনে অং সান সু চির বিশাল জয়ের আশা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের এ মন্ত্রী মনে করেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান মিয়ানমারে হাতে।
তিনি বলেন, জবাবদিহি ও বিচার নিশ্চিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। ‘এ সংকট সমাধানের জন্য প্রয়োজনে আমরা দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক সহায়তাও দেব।’
তিনি আরও বলেন, তারা চান রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া, তাদের চলাফেরার স্বাধীনতার পাশাপাশি স্কুল এবং চাকরির মতো প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। এছাড়া, রাখাইন উপদেষ্টা কমিশনের দেয়া সুপারিশগুলোও বাস্তবায়ন করা হোক।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরের বোঝা কমিয়ে আনার জন্য এবং বর্ষাকালে ভূমিধসের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ সরকার। বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা সম্প্রতি ভাসানচর পরিদর্শন করেছেন এবং কক্সবাজার শিবিরের চেয়ে সেখানকার সুযোগ-সুবিধা অনেক ভালো বলে জানিয়েছেন।
স্থানান্তরের এ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী আহমদ বলেন, যুক্তরাজ্যের বক্তব্য পুরোপুরি স্পষ্ট যে নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তরিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘ওই দ্বীপে ঘটে যাওয়া যৌন নির্যাতনসহ অন্যান্য নির্যাতনের ঘটনা শুনে আমরা অত্যন্ত চিন্তিত।’
বাংলাদেশ অবশ্য এসব ঘটনাকে পুরোপুরি মিথ্যা বলে অভিহিত করে এ ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে বসবাস করা নিরাপদ কি না তা নির্ধারণের জন্য চরটিতে সুরক্ষা বিষয়ে সমীক্ষা চালানো নিয়ে জাতিসংঘের আহ্বানকে আমরা সমর্থন করি। এটি নির্ধারণে পূর্ণ ও বিশদ মূল্যায়ন করা দরকার।’
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সংঘর্ষে উদ্বেগ
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সম্প্রতি বলেছিলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না হলে এটি অত্র অঞ্চলের ও আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশ কীভাবে এ জাতীয় নিরাপত্তাজনিত হুমকি এড়িয়ে যেতে পারে জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে সাম্প্রতিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়া ‘অত্যন্ত উদ্বেগের‘ বিষয় তবে আপাতত পরিস্থিতি শান্ত থাকায় তারা স্বস্তিতে আছেন।
মন্ত্রী আহমদ বলেন, ‘শিবিরগুলোতে যারা এর মুখোমুখি হচ্ছেন তাদের সহায়তায় মানবিক সহযোগীরা এগিয়ে আসায় আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে, রোহিঙ্গা জনগণ যে আঘাত ও সহিংসতার শিকার হয়েছে এবং তাদের নিয়ে তৈরি হওয়া দীর্ঘায়িত সংকট শিবিরগুলোতে এক হারিয়ে যাওয়া প্রজন্মের আশঙ্কা তৈরি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘হতাশার এ জায়গা থেকেই সম্ভবত উত্তেজনা ও ক্রমবর্ধমান অপরাধে তারা জড়িত হচ্ছে। এ জন্য যুক্তরাজ্য সহায়তা কর্মসূচির মধ্যে রোহিঙ্গা জনগণ ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা, চাকরি এবং দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ বাড়াতে সাহায্য করছে। যাতে মানুষ জীবনকে ভবিষ্যতে অর্থবহ করে তুলতে পারে।’
তিনি বলেন, তাদের এ কর্মসূচি জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তাদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে কাজ করছে।
প্রত্যাবাসন বা দীর্ঘ মেয়াদি সহায়তা
বাংলাদেশ চায় যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নিক। এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য গত ২২ অক্টোবর এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সম্মেলন বাংলাদেশের প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার সাথে সাংঘর্ষিক কি না জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী বলেন, তারা স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘকালীন প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানায় এবং এ লক্ষ্যে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, এটা যাতে সম্ভব হয় সেজন্য তারা মিয়ানমারকে সংকটের মূল কারণগুলো সমাধান করার বিষয়ে চাপ দিচ্ছেন।
তবে মন্ত্রী আহমদ বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো অব্যাহত সহিংসতা ও হুমকির মধ্যে এ মুহূর্তে প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী বলেন, ‘তা না হওয়া পর্যন্ত আমরা শরণার্থী ও বাংলাদেশি পরিবারগুলোকে সহায়তা করব এবং এমন পদক্ষেপ নেয়া হবে যা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের আত্মবিশ্বাস জোগাবে।’
তিনি বলেন, সেজন্য রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, চলাফেরার স্বাধীনতা, শিক্ষার সুযোগ ও জীবিকা নির্বাহের অধিকারের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পেতে হবে।
মন্ত্রী আহমদ বলেন, ‘যুক্তরাজ্য মিয়ানমার ও জাতিসংঘে এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছে এবং রাখাইন ও চিন রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোকপাত করে আমরা এ বছর তিনবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে এ বিষয়টি তুলে ধরেছি।
যুক্তরাজ্যের সহায়তা
মন্ত্রী আহমদ বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় সময়ে তাদের সাহয্য করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাজ্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ এবং সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত এ দেশকে সাহায্য অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, ‘গত মাসে আমরা বাংলাদেশের করোনাভাইরাস মোকাবিলা এবং ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রস্তুতির জন্য এক কোটি পাউন্ড সহায়তার ঘোষণা দিয়েছি।’
মন্ত্রী আহমদ বলেন, যুক্তরাজ্য কক্সবাজারের কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বাংলাদেশি মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে আরও ৩ কোটি ৭৫ লাখ পাউন্ড নতুন সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।
তিনি বলেন যে খাদ্য, পানি ও স্যানিটেশন সরবরাহ করার পাশাপাশি ভয়াবহ সহিংসতার শিকার হওয়াদের সেবা ও পরামর্শ দেবে যুক্তরাজ্য।