তবে রোহিঙ্গাদের টেকসই, স্বেচ্ছা, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো এখনও পূরণ করা হয়নি বলে জানান রাষ্ট্রদূত শিউয়াখ।
নিজ বাসভবনে ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানবিক প্রচেষ্টাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সহায়তার মধ্যে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে নথিভুক্তকরণ, শিক্ষা এবং দক্ষতার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ‘বড় সম্ভাবনা’ দেখছে সুইজারল্যান্ড
সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, এ সংকটকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট সকলকে আলোচনায় উৎসাহিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রদূত শিউয়াখ বলেন, ‘আমি বলতে পারি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানের জন্য এ অঞ্চলের সকল দেশ এবং অংশীদারের সাথে নিবিড় ও যৌথভাবে কাজ করছে।’
‘তারা আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইন কাঠামোর মধ্যেই একটি সমাধান খুঁজছেন,’ বলেন তিনি।
ভাসান চর
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন রাষ্ট্রদূত শিউয়াখ।
তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের উদারতা ও আতিথেয়তার প্রশংসা করি।’
সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের পরিকল্পিতভাবে ভাসান চরে স্থানান্তরের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য ইতোমধ্যে যা বলেছেন আমি সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করতে চাই। মৌলিক অধিকার, সুরক্ষা, পরিষেবা এবং পরিচালনা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো খুঁজে বের করা এবং কার্যকরভাবে তা সমাধান করা প্রয়োজন।’
রাষ্ট্রদূত শিউয়াখ বলেন, এ ধরনের স্থানান্তরের সম্ভাব্যতা এবং সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে একটি স্বাধীন এবং ব্যাপক কারিগরিগত মূল্যায়ন করা উচিত।
বাংলাদেশ সরকার বলছে, তারা এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে স্থানান্তরিত করবে এবং বড় কোনো ঘোষণা ছাড়াই ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে এ স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু হবে বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
ব্যাপক প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করা রাষ্ট্রদূত শিউয়াখ জানান, অংশীদারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের ব্যাপক সাড়া পেয়ে তিনি বিস্মিত।
সরকার, জাতিসংঘের কর্মকর্তা এবং অংশীদারদের সাথে সাক্ষাৎ করা এ সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে এ বিষয়ে খুব দৃঢ় এবং গুরুত্বপূর্ণ পারস্পারিক সমন্বয় রয়েছে।’
এছাড়া, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিটির মধ্যেও সকল অংশীদার যেভাবে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয় করছে, সেটি নিজের চোখে দেখার ইতিবাচক অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত শিউয়াখ।
‘নতুন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা এবং প্রয়োজনীয়তার ওপর মনোনিবেশ করে মানবিক সহয়তাকারীরা যেভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে তা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি,’ বলেন তিনি।
রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যেতে চায় উল্লেখ করে সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তাদের আশা দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কিত উদ্বেগসহ জীবনযাপন পরিস্থিতি এখনও ভয়ানক, বিশেষ করে নারী এবং কিশোরীদের মতো সবচেয়ে দুর্বল গোষ্ঠীর জন্য।’
কোভিড পরিস্থিতি শুরুর পর থেকে শিবিরগুলোতে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, রোহিঙ্গাদের জন্য জীবিকা ও শিক্ষার সুযোগের পাশাপাশি তাদের সুরক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের গুরুত্ব তুলে ধরে এসব বিষয়ে আলোকপাত করেছে সুইজারল্যান্ড।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে সুইজারল্যান্ড
সুইস রাষ্ট্রদূত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সুইজারল্যান্ডের সহায়তা কেবল শরণার্থী শিবিরগুলোই নয়, আশ্রয়দাতা স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছেও যাচ্ছে।
কক্সবাজারে স্যানিটেশন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুইজারল্যান্ডের সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে।
সুইস রাষ্ট্রদূত শিউয়াখ বলেন, ‘এটি জেলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং বর্তমান অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং প্রযুক্তি সুইজারল্যান্ডের রয়েছে, এটি নিয়ে আমি গর্বিত।’
প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থার অভাবের কারণে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে দুই দফায় প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার।