লালমনিরহাট, ০৩ সেপ্টেম্বর (ইউএনবি)-কালীগঞ্জ উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে খাল ও জলাশয়ের পুনঃখননে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী কৃষকরা আদালতে মামলা করেও কোনো ফল পায়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের দুপাশে এক হাজারেরও বেশি গাছ অবৈধভাবে কেটে নিয়ে গেছে খননকারীরা। এমনকি খাস জমি রেখে ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমিতে খাল-খননসহ খনন করা মাটি দিয়ে পাশের কৃষিজমি ভরাট করা হচ্ছে।
ব্যক্তি মালিকানা জমিতে খাল ও জলাশয়ের পুনঃখনন করা হচ্ছে জানিয়ে ভুক্তভোগী কৃষকরা আদালতে ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধের ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীখাতা মৌজার এক একর ৯০ শতাংশ জমি পৈত্রিক ও সম্পত্তি কেনাবেচায় নিবন্ধন (সাব কবলা) সূত্রে মালিকানা হিসেবে দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে ভোগদখল করছেন উপজেলার গেগরা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী খন্দকারের নাতি শফিকুল ইসলাম খন্দকার, আসাদুজ্জামান খন্দকার ও আনোয়ারুল ইসলাম খন্দকার। ব্যক্তি মালিকানা হিসেবে ওই জমি ভূমি উন্নয়ন করও পরিশোধ করেন তারা। জমিটির উত্তর পার্শ্বে ভেটেশ্বর খাল প্রবাহিত। আর এ জমির ফসলই তাদের উপার্জনের একমাত্র পথ। সম্প্রতি মালিকানাধীন জমিতে লাল নিশানা লাগান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইউএনও এবং জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে কয়েক দফায় অভিযোগ করে তদন্তের দাবি জানলেও কোনো প্রতিকার পায়নি কৃষকরা।
এছাড়া প্রভাবশালী ভূমি দস্যুদের মোটা অংকের টাকার জোরে তদন্তের অজুহাতে দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ করে খাল পুনঃখনন চালিয়ে যায় প্রশাসন। কোনো রুপ নোটিশ ছাড়াই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা মূল খালের উত্তরে থাকা প্রভাবশালী ভূমি মালিকদের মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে খালটি খাস জমি থেকে দক্ষিণে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে সরিয়ে নেয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এক কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে ৮ কিলোমিটার খালটি পুনঃখনন কাজ শুরু করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাজুল ইসলাম। প্রথমদিকে বাধা দিতে গিয়ে প্রভাবশালীদের সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সরকারি কাজে বাধাদান মামলার হুমকি দেন এবং জোরপূর্ব ৩শত মেহগনি গাছ, বাঁশ বাগান ও ফসলি জমির ওপর ভেকু মেশিনে খাল খনন করে পূর্বে খাল ভরাট করে প্রভাবশালীদের দখলে দেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শফিকুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘রেকর্ড, দলিল, নামজারি ও খাজনাসহ সব আমাদের নামে। অথচ পাশে খাস জমি রেখে পুরাতন খাল ভরাট করে আমাদের ফসলি জমিতে খাল পুনঃখনন করা হয়েছে।’ বিষয়টি উচ্চমহলের তদন্তের দাবি জানান তিনি।
খাল পুনঃখনন কাজের তদারকি কর্মকর্তা লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডে উপসহকারী প্রকৌশলী লিটন আলী বলেন, খালের পানি রক্ষায় যেটাতে সহজতর হবে। সেদিকে খালটি খনন করা হয়েছে। তবে কারো ব্যক্তিগত জমিতে নয়, খনন হয়েছে ১নং খতিয়ানভুক্ত খাস জমিতে। তবে সেই জমির ভূমি উন্নয়ন কর কেন ভূমি অফিস গ্রহণ করেছেন। সেটা ভূমি অফিসের বিষয় বলেও দাবি করেন তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সাঈদ বলেন, কৃষকদের অভিযোগটি সার্ভেয়ারকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। সার্ভেয়ার একাই দুই স্টেশনে দায়িত্ব পালন করায় তদন্ত করতে পারেননি। তবে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।