গোবিন্দ চন্দ্র দেবের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের নন্দিরফল গ্রামে। এখানে এখন তার নামমাত্র একটি বাড়ি আছে। একটি স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ হয়েছে বহু আগে। যেটি পড়ে আছে অবহেলায়-অযত্নে।
গ্রামে থাকা পৈত্রিক একমাত্র বাড়িটি বেদখল হয়েছে প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায়। এটি এখন কার দখলে, কী অবস্থায় আছে সে তথ্যও জানাতে চান না স্থানীয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুশফিকুন নূর।
আরও পড়ুন: বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা এঁকেছিল জামায়াতে ইসলামী: তথ্যমন্ত্রী
গ্রামের বাড়ির এ পৈত্রিক ভিটা স্থানীয় প্রভাবশালীরা খাবলে খেলেও কোনো দায় নেই স্থানীয় প্রশাসনের। উপরন্তু তারা দখলদারদের পক্ষ নিয়ে স্মৃতি বিজড়িত এ বাড়িটি বেদখল হতে সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ আছে।
সূত্র জানায়, গত ৩০ বছরে একবারের জন্যও বাড়িটি অবৈধ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অবৈধ দখলদারদের সংখ্যা কেবল বাড়লেও বাড়িটি রক্ষায় কেউ কথা বলে না।
ড. জিসি দেবের জন্ম ১৯০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। তিনি তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের পঞ্চখণ্ড পরগনার (বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা) গ্রাম লাউতাতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার মৃত্যুর পর জিসি দেব স্থানীয় মিশনারীদের তত্ত্বাবধানে বড় হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন ড. জিসি দেব। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে জাতিকে মেধাশূন্য করতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিববাড়ীর নিজ বাসভবনে নির্মমভাবে এ জ্ঞানপ্রদীপকে হত্যা করে।
আরও পড়ুন: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
ড. জিসি দেবের বাসায় তার সাথে স্বামীসহ পালিতা কন্যা রোকেয়া বেগম থাকতেন। ২৫ মার্চ ভোরের দিকে তার বাসায় দরজা ভেঙে পাকিস্তানি সেনারা প্রবেশ করে। পরে কয়েক হাত ব্যবধানে থেকে সেনাসদস্যরা ব্রাশ ফায়ার করে জিসি দেব ও রোকেয়া বেগমের স্বামীকে হত্যা করে। রোকেয়া বেগম আকস্মিক আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ডে অচেতন হয়ে পড়ায় বেঁচে যান। ২৬ মার্চ বিকালে জগন্নাথ হলের পাশে গর্ত খুঁড়ে মাটি চাপা দেয়া হয় হলের প্রভোস্ট ড. দেবসহ অন্যদের।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, বিয়ানীবাজারের পৈত্রিক বাড়িটি অবৈধ দখলমুক্ত করা ও তার স্মৃতি রক্ষায় বিয়ানীবাজারে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হলেও তাদের কোন সক্রিয় কর্মসূচি নেই।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালীক ফারুক বলেন, ‘ড. জিসি দেব বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছেন। দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। অথচ তার বেদখল হওয়া বাড়ির পক্ষে কথা বলার লোক নেই বিয়ানীবাজারে।’
কবি ফজলুল হক বলেন, ড. জিসি দেবের স্মৃতি রক্ষায় পৈত্রিক বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বা এ সংক্রান্ত কোনো বিশেষ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেতে পারে। কিন্তু সে উদ্যোগ নেবে কে- এমন প্রশ্ন করেন তিনি।
বিয়ানীবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি আতাউর রহমান জানান, প্রশাসন সক্রিয় হলেই সব সম্ভব। অবৈধ দখল কোনো ব্যাপার নয়, প্রয়োজন আন্তরিকতার।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুস শুকুর বলেন, ‘জিসি দেবের নামে বা দান করে দেয়া রাজধানী ঢাকার অনেক জমিজমাও বেদখল হয়ে গেছে বলে শুনেছি। আসলে তার কোনো উত্তরাধিকার না থাকায় এমনটি হচ্ছে।’