সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণের ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারা।ঘটনার এক সপ্তাহ পর পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপশি স্থানীয় বাসিন্দাদের শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। আগুন লাগার পর অন্তত ৬৫ ঘণ্টা লাগে নিয়ন্ত্রণে আনতে। আর পুরোপুরি নেভাতে লেগেছে ৯৫ ঘণ্টার বেশি। তারপরও কালো ধোঁয়ার নির্গমন বন্ধ হয়নি।এতে চোখের যন্ত্রণার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এমনিতে আগুন ও বিস্ফোরণের পরপরই আতঙ্কিত হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে গেছেন অনেকে। তারা যেমন বসতবাড়িতে ফেরেননি, তেমনি বাকি যারা বাড়িতে ছিলেন তারাও গ্রাম ছাড়ছেন অসুস্থতার ভয়ে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, কন্টেইনার ডিপোটিতে ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ছিল। হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। এটি যদি উত্তপ্ত করা হয়, তাহলে তাপীয় বিয়োজনে হাইড্রোজেন পারক্সাইড বিস্ফোরকের আচরণ করে। আগুন লাগার পর কন্টেইনারগুলোয় বিস্ফোরণ ঘটে।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: বিএম কন্টেইনার ডিপো থেকে দেহাবশেষ উদ্ধার
গত ৪ জুন শনিবার রাতের বিকট বিস্ফোরণের পর কন্টেইনারে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক মিশে গেছে বাতাসে। আবার পানির সঙ্গে মিশে চলে গেছে বিভিন্ন খাল হয়ে বঙ্গোপসাগরে। বিস্ফোরণের পর থেকেই সীতাকুণ্ডের ওই এলাকায় ঝাঁজালো গন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই চোখে ঝাপসা দেখছেন; কারও কারও চামড়া বিবর্ণ বা লাল হয়ে গেছে। শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, বমিসহ দেখা দিচ্ছে নিত্যনতুন নানা উপসর্গ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও পরিবেশবিদরা বলছেন, সীতাকুণ্ডের এই এলাকায় প্রকৃতি বা পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকিতে পড়তে পারে। সেটা স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। এ অবস্থায় ভারী বৃষ্টিপাত হলে বায়ুদূষণ কমে পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তবে রাসায়নিক মিশ্রিত পানি খালগুলোতে গিয়ে দূষণ সৃষ্টি হতে পারে। সব মিলিয়ে জনস্বাস্থ্যের ওপর নিঃসন্দেহে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তারা আরও বলছেন, সীতাকুণ্ডের বাতাসে কী পরিমাণ রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, সেটা পরিমাপ করে দেখতে পারে পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই এলাকার বাতাসে পিপিএমের (পার্টস পার মিলিয়ন) মাত্রা বেশি হলে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব পড়বে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডিপোর প্রবেশপথে দক্ষিণ পাশে গভীর ও চওড়া একটি নালা। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মিশ্রিত পানি যাতে খাল-বিলে গিয়ে দূষণ ঘটাতে না পারে সেজন্য নালার মাঝ বরাবর বালির বস্তা ফেলে বাঁধ নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা। ঘটনার পরদিন তৈরি করা ওই বাঁধ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া প্রত্যক্ষভাবে ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। আর এর দূরবর্তী প্রভাব পড়েছে ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় রাসায়নিকের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে।
বিএম ডিপোর পাশ্ববর্তি মোল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রমজান হোসেন জানান, ভয়াবহ আগুনে আশপাশের এলাকাগুলোয় রাসায়নিকের পোড়া গন্ধে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তার পাঁচ বছরের সন্তান ধোঁয়ায় অসুস্থবোধ করলে আরেক আত্মীয়ের বাড়িতে পরিবারকে রেখে এসেছেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: ফায়ার সার্ভিসের আরও এক কর্মীর মৃত্যু