রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অবশেষে আফগানিস্তানের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল নিজেদের দখলে নিয়েছে আফগানিস্তানের সশস্ত্র এবং সাবেক শাসক গোষ্ঠী তালেবান। বিশ্বের কাছে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে পরিচিত দলটি গেলো শুক্রবারে দেশটির আরও চারটি প্রদেশ নিজেদের দখলে নেওয়ার মাধ্যমে পুরো দক্ষিণাঞ্চল দখল সম্পন্ন করেছে।
দেশটির দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাত এবং কান্দাহার ইতোমধ্যেই দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। পাশাপাশি হেলমান্দ প্রদেশও সম্পূর্ণভাবে দখলে নিয়েছে তালেবানরা। এখানেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ন্যাটোর সাথে তালেবান যোদ্ধাদের বেশ কয়েকবার ব্যাপক যুদ্ধ হয়।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনায় সাড়ে ৪৩ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু
যুক্তরাষ্ট্রের নয়া রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পুনরায় দেশের শাসন ক্ষমতা দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তালেবান।
মার্কিন সেনাদের শেষ দল দেশটি ছেড়ে যাবার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে আফগানিস্তানের মোট ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্রাদেশিক রাজধানী এবং পুরো দেশে দুই-তৃতীয়াংশের দখল নিয়েছে তালেবান।
তবে পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থন থাকা দেশটির বর্তমান সরকার আফগানিস্তানে কেন্দ্রীয় রাজধানী কাবুলসহ কেন্দ্রীয়, পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরের প্রদেশগুলো নিজেদের দখলে রেখেছে।
তবে তালেবান বাহিনী বর্তমানে কাবুল থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে লোগার প্রদেশে সরকারি বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করছে। যার ফলে রাজধানী কাবুল ইতোমধ্যেই ঝুঁকির মুখে পড়েছে। মার্কিন বাহিনীর মতে তালেবানরা এক মাসের মধ্যেই কাবুল দখল এবং দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে পুরো দেশ নিজেদের দখলে নিতে পারে।
শুক্রবারে বেশ কয়েকটি প্রদেশের পতন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের প্রস্থানের পর থেকেই ওই সকল এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে কাবুলের দিকে ছুটছে। অনেকেই আবার আফগানিস্তান বর্ডার পেরিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নিচ্ছেন।
আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিন-দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই তিন হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে কাবুলের আমেরিকান দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সড়িয়ে নিতে। যুক্তরাজ্য এবং কানাডা সরকারও তাদের সৈন্য প্রেরণ নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে।
এদিকে ডেনমার্ক সাময়িক সময়ের জন্য আফগানিস্তানের নিজেদের দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা করেছে। আর জার্মান দূতাবাস নিজেদের লোকবল ব্যাপক হারে কমিয়েছে।
জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস ইতোমধ্যেই তালেবানকে সহিংসতা বন্ধ করে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন। গুতেরেস জানান, তালেবান দখলকৃত এলাকায় নারী ও সাংবাদিকদের প্রতি তাদের আচরণে তিনি অত্যন্ত চিন্তিত।
আরও পড়ুন: হিরোশিমায় মার্কিন পারমাণবিক হামলার ৭৬ বছর পূর্তি
১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান থেকে সৈন্য ফিরিয়ে নেওয়ার পর দেশটিতে গৃহযুদ্ধের শুরু হয়েছিল। অনেকেই ধারণা করছে, দেশটিতে আবারও একই পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে গত মে মাসের শেষ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখের বেশি আফগান নাগরিক নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। এদের ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু। সংস্থাটির মতে, এই বছরে প্রায় চার লাখ আফগান নাগরিক নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়েছেন।
এদিকে কাতারে বর্তমান সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যস্ততায় তালেবান ও আফগান সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। তারা আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। আফগান সরকার তালেবানকে অর্ধেক ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিলেও তালেব প্রতিনিধি দল তা প্রত্যাখান করে।